ইসলামিক
Islamic
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
আরবি ভাষায়া ঈমান শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো স্বীকৃতি দেওয়া, স্বীকার করা বা মেনে নেওয়া। অর্থাৎ কোন বিষয়ে বিশ্বাসের প্রকৃতি বা ধরনের নাম হলো আকীদা, আর কোন আকীদা বা বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেওয়া বা মেনে নেওয়ার নাম হলো তার উপর ঈমান আনা।
সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল ঈমান। ঈমানের বিপরীত কুফর। ঈমান সত্য, কুফর মিথ্যা। ঈমান আলো, কুফর অন্ধকার। ঈমান জীবন, কুফর মৃত্যু। ঈমান পূর্ণ কল্যাণ আর কুফর পূর্ণ অকল্যাণ। ঈমান সরল পথ, আর কুফর ভ্রষ্টতার পথ।
ঈমান মুসলমানের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। ঈমানদার সকল কষ্ট সহ্য করতে পারে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, কিন্তু ঈমান ছাড়তে পারে না। আর একারণে মুমিনকে হতে হবে সুদৃঢ় সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠ। মুমিন কখনো শৈথিল্যবাদী হতে পারে না। কুফরির সাথে যেমন তার সন্ধি হতে পারে না তেমনি মুরতাদ ও অমুসলিমদের সাথেও বন্ধুত্ব হতে পারে না। ঈমানই তার কাছে সবকিছু থেকে বড়। ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয়, ইসলামকে তার সকল অপরিহার্য অনুষঙ্গসহ মনেপ্রাণে কবুল করার নাম।কাকে বলে ঈমান, আর তার অপরিহার্য অনুষঙ্গ, নীচে এর উপরই আলোকপাত করা হল।
১. ঈমান অহীর মাধ্যমে জানা সকল সত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করার নাম
অজ্ঞতা-অনুমান আর কল্পনা-কুসংস্কারের কোনো অবকাশ ঈমানে নেই। ঈমান ঐ সত্য সঠিক আকীদাকে স্বীকার করার ও সত্য বলে বিশ্বাস করার নাম, যা আসমানী ওহীর দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, যে অহী ‘আল কুরআন কারীম’ এবং ‘আস্সুন্নাতুন নাবাবিয়্যাহ’ রূপে এখনো সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে ইনশাআল্লাাহ।
২. ঈমান অর্থ সমর্পণ
ঈমান আনার অনিবার্য অর্থ, বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। তাঁর প্রতিটি আদেশ শিরোধার্য করবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান আর আল্লাহর বিধানে আপত্তি একত্র হতে পারে না। রাসূলের প্রতি ঈমান আর তাঁর আদর্শের উপর আপত্তি, কুরআনের প্রতি ঈমান আর তার কোনো আয়াত বা বিধানের উপর আপত্তি কখনো একত্রিত হয় না। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমর্পণ আর ইবলীস ও তার অনুসারীদের বৈশিষ্ট্য বিপরীত যুক্তি। এখন তো শুধু আপত্তি বা বিপরীত যুক্তিই নয়, রাসূল, কুরআন ও ইসলামের প্রতি প্রকাশ্য বিদ্রোহকারীকেও মুসলমান মনে করা হয়। কারো প্রতি ঈমান, অতপর তার বিরুদ্ধতা এ দুটো একত্র হওয়া অসম্ভব হলেও ‘অসহায়’ ইসলামের ব্যাপারে বর্তমানের ‘বুদ্ধিজীবী’দের কাছে তা পুরাপুরিই সম্ভব। বুদ্ধিমান মানুষমাত্রই জানেন, ইসলাম বিহীন তথা সমর্পণ বিহীন ঈমানের কথা কল্পনাও করা যায় না। আর না তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এ তো ঈমানের সাথে সরাসরি বিদ্রƒপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
قُلۡ اِنَّنِیۡ هَدٰىنِیۡ رَبِّیۡۤ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ۬ۚ دِیۡنًا قِیَمًا مِّلَّۃَ اِبۡرٰهِیۡمَ حَنِیۡفًا ۚ وَ مَا كَانَ مِنَ
الۡمُشۡرِكِیۡنَ
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُكِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ
لَا شَرِیۡكَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِكَ اُمِرۡتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
অর্থ: বল, আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সেটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।বল, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেওয়া হয়েছে এবং আমি তাঁর সম্মুখে সর্বপ্রথম মাথানতকারী। (আল আনআম, আয়াত: ১৬১-১৬৩)
৩. কোনো বিষয়েক শুধু আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের (সাঃ) প্রতি আস্থার ভিত্তিতে মেনে নেয়ার নাম ঈমানআল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী পৌছার পর তা গ্রহণ করতে বিলম্ব করার কোনই অবকাশ নেই। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদের শুরুতেই মুমিনের গায়েবে বিশ্বাস করার এই গুন-বৈশিষ্ট্যের প্রশংসা করে বলেছেন:
الٓـمّٓ ۚ﴿۱﴾ذٰلِكَ الۡكِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ﴿۲﴾ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ
یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ﴿۳﴾وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ؕ﴿۴﴾ اُولٰٓئِكَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۵﴾
অর্থ: আলিফ লাম মীম, এটি সেই কিতাব এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা হিদায়াত এমন ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। এবং যারা ঈমান রাখে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতেও এবং তারা আখিরাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে। এরাই এমন লোক, যারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সঠিক পথের উপর আছে এবং এরাই এমন লোক, যারা সফলতা লাভকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত:১-৫)
৪. ঈমান শুধু গ্রহণ নয়, বর্জনও, সত্যকে গ্রহণ আর বাতিলকে বর্জন
কোনো আকীদাকে মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তার বিপরীত বিষয়কেও সঠিক মনে করা স্ববিরোধিতা, মানবের সুস্থ বুদ্ধি তা গ্রহণ করতে পারে না। ইসলামেও তা অকল্পনীয়। ঈমান তখনই সাব্যস্ত হবে যখন বিপরীত সব কিছু বাতিল ও মিথ্যা মনে করবে এবং তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। সকল প্রকারের শিরক ও কুফর থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা সরাসরি ঈমানেরই অংশ। যেমন ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাওহীদ। তাওহীদ কি শুধু আল্লাহ তাআলাকে মাবুদ মানা? না। তাওহীদ অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে সত্য মাবুদ বলে বিশ্বাস করা এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে বা কোনো কিছুকে মাবুদ বলে স্বীকার না করা। তাওহীদ অর্থ, আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করা, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত না করা। তাওহীদ অর্থ, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য না চাওয়া। তাওহীদের অর্থ, একমাত্র আল্লাহকেই কল্যাণ-অকল্যাণের হায়াত মওতের মালিক মনে করা, অন্য কাউকে এসব বিষয়ে ক্ষমতাশালী মনে না করা। তাওহীদ অর্থ, শুধু আল্লাহকে আহকামুল হাকিমীন মনে করা, আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কারো হুকুম স্বীকার না করা, তাওহীদ অর্থ, শুধু শরীয়তে মুহাম্মাদিয়ার আনুগত্যকেই অপরিহার্য মনে করা, অন্য কোনো শরীয়তের আনুগত্য বৈধ মনে না করা। তাওহীদ অর্থ, শুধু ইসলামকেই হক্ব ও সত্য মনে করা, অন্য কোনো দ্বীনকে হক্ব ও সত্য মনে না করা।
মোটকথা, সব জরুরিয়াতে দ্বীন (দ্বীনের সর্বজনবিদিত বিষয়) এবং অকাট্য আকীদা ও আহকাম এই প্রকারেরই অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয়ে ঈমান তখনই সাব্যস্ত হবে যখন তার বিপরীত বিষয়কে বাতিল ও মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হবে। আর তা থেকে ‘তাবার্রি’ (সম্পর্কহীনতা) অবলম্বন করা হবে। এ সব তো ‘মুজতাহাদ ফী’ (যাতে শরীয়তের দলীলের ভিত্তিতে একাধিক মত হতে পারে) বা ‘তানাওউয়ে সুন্নত’ (যাতে একাধিক সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি রয়েছে)-এর ক্ষেত্র নয় যে, বিপরীত দিকটিকেও গ্রহণযোগ্য বা নীরবতার যোগ্য মনে করা যায়।
আজকাল দ্বীন ও ঈমানের বিষয়ে যেসব বিপদ ও ফিৎনার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় ফিৎনা এটাই যে, জরুরিয়াতে দ্বীন, মৌলিক আকীদা ও ঐকমত্যপূর্ণ বিষয়াদিকেও একাধিক মতের সম্ভাবনাযুক্ত বিষয়াদির মতো মত প্রকাশের ক্ষেত্র বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ এগুলো হচ্ছে হুবহু মেনে নেওয়ার বিষয়। এগুলো তো ‘ধারণা’ ও ‘মতামত’ প্রকাশের ক্ষেত্রই নয়। এসব ক্ষেত্রে একমাত্র সেটিই সত্য, যা কুরআন মজীদ, সুন্নতে মুতাওয়ারাছা (গোটা মুসলিম উম্মাহর মাঝে সর্বযুগে প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ) ও ইজমার দ্বারা প্রমাণিত।
এখানে বিপরীত দিকগুলোর কোনো অবকাশই নেই। সেগুলো নিঃসন্দেহে বাতিল ও ভ্রান্ত। এই হক ও সত্যকে গ্রহণ করা এবং সকল বিরোধী মত, চিন্তা ও দর্শন, যা নিঃসন্দেহে বাতিল ও ভ্রান্ত, তা থেকে তাবার্রি (সম্পর্কহীনতা) অবলম্বনের নাম ঈমান।
ইবরাহীম আ. তাঁর কওমকে বলেছিলেন:
يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ: ‘হে আমার স¤প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। * আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (আল আনআম ৬,আয়াত : ৭৮-৭৯)
সূরা মুমতাহিনায় বলা হয়েছে-
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيهِمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآَخِرَ وَمَنْ يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
অর্থ: তোমার জন্য ইবরাহীম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের স¤প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা অল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন’, তবে ব্যতিক্রম তার পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তি; আমি নিশ্চয়ই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব; এবং তোমার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট আমি কোনো অধিকার রাখি না।
আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনারই উপর নির্ভর করেছি, আপনারই দিকে আমরা রুজু হয়েছি এবং আপনারই কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে
আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে কাফেরদের পরীক্ষার পাত্র বানাবেন না এবং হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই কেবল আপনিই এমন, যার ক্ষমতা পরিপূর্ণ, হেকমতও পরিপূর্ণ
(হে মুসলিমগণ!) নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য তাদের (কর্মপন্থার) মধ্যে আছে উত্তম আদর্শ, প্রত্যেক এমন ব্যক্তির জন্য, যে, আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে। আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (সে যেন মনে রাখে), আল্লাহ সকলের থেকে মুখাপেক্ষীতাহীন, আপনিই প্রশংসার্হ। (সূরা মুমতাহিনা ৬০, আয়াত : ৪-৬)
হূদ আ. তার কওমের উত্তরে বলেছিলেন-
إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ ষ مِنْ دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ ষ إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آَخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
অর্থ: আমি তো আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয়ই আমি তা হতে মুক্ত, যাকে তোমরা আল্লাহর শরীক কর, * আল্লাহ ব্যতীত তোমরা সকলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, অতঃপর আমাকে অবকাশ দিয়োনা। * আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর উপর; এমন কোনো জীবজন্তু নেই, যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক আছেন সরল পথে।(হূদ ১১, আয়ত : ৫৪-৫৬)
৫. ঈমান অবিচল বিশ্বাসের নাম
ঈমান অটল ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। সংশয় ও দোদুল্যমানতার মিশ্রণএখানে হতে পারে না। সংশয়ই যদি থাকল তাহলে তা ‘আকীদা হয় কীভাবে ’? বিশ্বাস যদি দৃঢ়ই না হল তাহলে তা ঈমান কীভাবে হয়?কুরআন মজীদের ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ
অর্থ: তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ। (আলহুজুরাত ৪৯, আয়াত: ১৫)
৬. ঈমান সত্যের সাক্ষ্যদান এবং আরকানে ইসলাম পালনের নাম
অন্তরের বিশ্বাসের সাথে মুখেও সত্যের সাক্ষ্য দেওয়া ঈমানের অন্যতম রোকন। হাদীস শরীফে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবীআ গোত্রের প্রতিনিধিদলকে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার আদেশ করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-
أتدرون ما الإيمان بالله وحده؟ قالوا : الله ورسوله أعلم، قال : شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمدا رسول الله، وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة وصيام رمضان، وأن تعطوا من المغنم الخمس.
অর্থ: তোমরা কি জান ‘এক আল্লাহর উপর ঈমান’ কাকে বলে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন, (এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, অল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযানের রোযা রাখা ও গণীমতের এক পঞ্চমাংশ প্রেরণ করা। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৩, কিতাবুল ঈমান)
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا وَإِنَّهُ فِي الْآَخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ, إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ, وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অর্থ: বল, সাক্ষ্য হিসেবে সবচেয়ে বড় বস্ত কী? বল, আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে যেন তোমাদেরকে এবং যার নিকট এটা পৌঁছবে তাদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করি। তোমরা কি এই সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও আছে? বল, ‘আমি সে সাক্ষ্য দেই না’। বল, তিনি তো এক ইলাহ এবং তোমরা যে শরীক কর তা হতে আমি অবশ্যই নির্লিপ্ত। আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছে তারা তাকে সেইরূপে চিনে যেইরূপ চিনে তাদের সন্তানগণকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা বিশ্বাস করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করে অথবা তার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চিত জেনে রাখ, জালিমরা সফলতা লাভ করতে পারে না। (আল আনআম ৬, আয়াত: ১৯-২১)
৭. ঈমান শরীয়ত ও উসওয়ায়ে হাসানাকে গ্রহণ করার নাম
ইসলামকে শুধু সত্য ও সুন্দর জানা বা বলার নাম ঈমান নয়। কারণ, হক ও সত্যকে শুধু জানা বা মুখে বলা ঈমান সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। ঈমান তো তখনই হবে যখন এই সত্যকে মনেপ্রাণে কবুল করবে এবং এর সম্পর্কে অন্তরে কোনো দ্বিধা থাকবে না। ইসলাম তো ‘আকীদা’ ও ‘শরীয়ত’-এ দুইটার সমষ্টির নাম। এ দুটোর বিশ্বাস এবং মেনে নেওয়ার দ্বারাই ঈমান সাব্যস্ত হতে পারে। ‘শরীয়ত’ অর্থ, দ্বীনের বিধিবিধান ও ইসলামী জীবনের নবী-আদর্শ, কুরআন যাকে মুমিনের জন্য উসওয়ায়ে হাসানা সাব্যস্ত করেছে।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থ: কিন্তু না, তোমারপ্র্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে মেনে নেয়। (আন নিসা ৪,আয়াত : ৬৫)
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيعَةٍ مِنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ষ إِنَّهُمْ لَنْ يُغْنُوا عَنْكَ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ ষ هَذَا بَصَائِرُ لِلنَّاسِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ
অর্থ: এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ শরীয়তের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। আল্লাহর মুকাবেলায় তারা তোমার কোনোই উপকার করতে পারবে না; যালিমরা একে অন্যের বন্ধু; আর আল্লাহ তো মুত্তাকীদের বন্ধু। এই কুরআন মানবজাতির জন্য সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী স¤প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও রহমত। (আল জাছিয়া ৪৫, আয়াত : ১৮-২০)
৮. আস্থা-ভালবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা ছাড়া ঈমান হয় না; বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা অস্বীকারের চেয়েও ভয়াবহ কুফর
কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের প্রতি ঈমান তখনই হতে পারে যখন তার উপর থাকে পূর্ণ আস্থা, অন্তরে তাঁর প্রতি থাকে ভক্তি ও শ্রদ্ধা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল, তাঁর নাযিলকৃত আসমানী কিতাব, তাঁর বিধান ও শরীয়ত এবং তাঁর দীনের সকল নিদর্শনের সাথে মুমিনের সম্পর্ক ঐ আস্থা-বিশ্বাস এবং ভক্তি-শ্রদ্ধারই সম্পর্ক।
যার প্রতি বা যে বিষয়ে ঈমান আনা হয়েছে তার প্রতি বা ঐ বিষয়ে আস্থা-বিশ্বাস এবং ভক্তি-ভালবাসাই হচ্ছে ঈমানের প্রাণ। চিন্তা-ভাবনা এবং আমল ও আলোচনার দ্বারা একে শক্তিশালী করা এবং গভীর থেকে গভীরতর করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব।
অবজ্ঞা ও বিদ্রপ বিরাগবিদ্বেষের চেয়হীন ও ভয়াবহ
ভদ্রতা ও মানবতার ছিটেফোঁটাও যার মধ্যে আছে তার কোনো ব্যক্তি, ধর্ম বা মতবাদের প্রতি বিদ্বেষ থাকলেও কখনো সে হীনতা ও অশ্লীলতায় নেমে আসতে পারে না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা-বিদ্রূপ এবং কটূক্তি ও গালিগালাজের মতো নীচ কর্মে অবতীর্ণ হতে পারে না। কারণ এটা বিদ্বেষ ও শত্রুতা প্রকাশের চরম হীন উপায়। শরাফতের লেশমাত্র আছে এমন কেউ তা অবলম্বন করতে পারে না। যেহেতু ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম তাই দুষ্কৃতিকারী ও ভ্রান্ত মতে বিশ্বাসীই এর শত্রু। এদের অতিমাত্রায় উগ্র ও কট্টর শ্রেণীটি তাচ্ছিল্য, বিদ্রূপ ও অশ্লীল বাক্যের দ্বারা এই শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয় থাকে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সকল যুগের উগ্র কাফির-মুশরিকের প্রবণতা এটাই ছিল। এদের যে শ্রেণীটি এ অসভ্যতাকে মুনাফিকীর আবরনে আবৃত রাখার চেষ্টা করেছে তারাও এতে সফল হতে পারেনি।
এদের সাথে মুসলিম জনগণের আচরণ কী হবে এবং রাষ্ট্রপক্ষের আচরণ কী হবে তা আলাদা আলোচনা। এখানে যে কথাটি বলতে চাই, তা এতই স্পষ্ট যে, বলারও প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু আমরা এমন এক পরিবেশে বাস করি, মনে হয়, এই সুস্পষ্ট কথাটিও অনেকেরই জানা নেই বা উপলব্ধিতে নেই।
তা এই যে, ইসলাম, ইসলামের নবী (কিংবা ইসলামের কোনো নিদর্শন সম্পর্কে কটূক্তিকারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কিংবা তার কোনো বিধানের অবজ্ঞা ও বিদ্রƒপকারী যদি মুসলিমপরিবারের সন্তান হয়, মুখে কালিমা পাঠকারীও হয় তবুও সে কাফির ও মুসলমানের দুশমন। শরীয়তের পরিভাষায় এই প্রকারের কাফিরের নাম ‘মুনাফিক’, ‘মুলহিদ’ ও যিনদীক। এই স্পষ্ট বিধান এখন এজন্যই বলতে হচ্ছে যে, আমাদের সমাজে এমন লোকদের কুফরী কর্মকান্ড থেকেও বারাআত (সম্পর্কহীনতা) প্রকাশ নিজের ঈমান রক্ষার জন্য অপরিহার্য মনে করা হয় না; বরং এদের সাথেও মুসলমানদের মতো আচরণ করা হয়, এদের প্রশংসা করা হয়, এদেরকে ‘জাতীয় বীরে’ পরিণত করার চেষ্টা করা হয়।
কুরআন মজীদ পাঠ করুন এবং স্বয়ং আল্লাহ তাআলার নিকট থেকেই শুনুন, ইসলাম ইসলামের নিদর্শনের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক কেমন হয় আর কাফির-মুনাফিকের আচরণ কেমন হয়। এরপর ফয়সালা করুন, আপনি কাদের সাথে থাকবেন। কুরআন কারীমে আরো দেখুন, যারা ইসলামের সাথে, ইসলামের নবীর সাথে ও ইসলামের নিদর্শনসমূহের সাথে বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল ও মুসলমানদের কষ্ট দেয় তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ফয়সালা কী।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ. وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَا يَعْقِلُونَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে তাদেরকে ও কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং যদি তোমরা মুমিন হও তবে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যখন সলাতের জন্য আহবান জানাও তখন তারা সেটিকে তামাশা ও খেলার বস্ত হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা হল নির্বোধ স¤প্রদায়। (আল মাইদা ৫, আয়াত : ৫৭-৫৮)
বোঝা গেল, নামাযের অবজ্ঞাকারী ও নামায থেকে বাধাদানকারী ঐ যুগেও ছিল, কিন্তু মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলার বিধান, তোমরা কখনো তাদের কথয় কর্ণপাত করো না; বরং আল্লাহকেই সিজদা করতে থাক এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে থাক।দুনিয়াতে যে সিজদা থেকে বিমুখ থাকে কিংবা তার অবজ্ঞা ও বিদ্রƒপ করে, আখিরাতে শত চেষ্টা করেও সে সিজদার সুযোগ পাবে না।
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ ষ خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ وَقَدْ كَانُوا يُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ وَهُمْ سَالِمُونَ
অর্থ: স্মরণ কর, সেই দিনের কথা যেদিন ‘সাক’ উন্মোচিত করা হবে, সেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে অহবান করা হয়েছিল সিজদা করতে। (আল কলম ৬৮, আয়াত: ৪২-৪৩)
বিদ্বেষ ও ঈমান একত্র হওয়া অসম্ভব। যার প্রতি ঈমান থাকবে তার প্রতি ভালবাসাও থাকবে। পক্ষান্তরে যার প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা থাকবে তার প্রতি ঈমান থাকতে পারে না। অন্তরের বিদ্বেষ সত্তে¡ও যদি মুখে ঈমান প্রকাশ করে তবে তা হবে মুনাফিকী।মুসলমানের ভালবাসা হবে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর নেক বান্দাদের প্রতি। আর কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকের ভালবাসা হবে তাদের নিজ নিজ উপাস্য ও নেতাদের প্রতি।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ষ إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ ষوَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَৎ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এমন এক স¤প্রদায় আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসেন; তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে; তারা আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও মুমিনগণ, যারা বিনত হয়ে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। কেউ আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে আল্লাহর দলই তো বিজয়ী হবে। (আল মাইদা ৫ আয়াত: ৫৪-৫৫)
সূরা তাওবায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে
قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
অর্থ: বল, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং আল্লাহর পথে জিহাদ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পতœী, তোমাদের স্বগোত্রীয়, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ সত্যত্যাগী স¤প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (আত তাওবা ৯, আয়াত: ২৪ )
আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব এবং তার প্রদত্ত শরীয়ত অপছন্দ করা কুফরী। যে এই কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তিদের কিছুমাত্র সমর্থন করবে সে মুরতাদ।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ ষ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ ষ فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ ষ ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ: যারা নিজেদের নিকট সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর তা পরিত্যাগ করে শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেখায়। এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তায়ালা যা অবতীর্ণ করেন, তা যারা অপছন্দ করে তাদেরকে ওরা বলে, ‘আমরা কোনো কোনো বিষয়ে তোমাদের আনুগত্য করব’’ আল্লাহ তায়ালা ওদের গোপন অভিসন্ধি অবগত আছেন। ফিরিশতারা যখন ওদের মুখমন্ডলে ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন ওদের দশা কেমন হবে! এটা এইজন্য যে, ওরা তার অনুসরণ করে, যা আল্লাহ তায়ালার অসন্তোষ জন্মায় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অপ্রিয় গণ্য করে। তাই তিনি এদের কর্ম নিষ্ফল করে দেন। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭, আয়াত: ২৫-২৮ )
মোটকথা, ইসলাম, ইসলামের নবী ও ইসলামের নিদর্শন ও ইসলামের বিধানসমূহের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি- শ্রদ্ধা ঈমানের অপরিহার্য অংশ, যা ছাড়া ঈমান কল্পনাও করা যায় না। আর এইসব বিষয়কে অবজ্ঞা, বিদ্রƒপ করা, বিদ্বেষ পোষণ করা, এমনকি অপ্রীতিকর মনে করাও কুফরী ও মুনাফিকী। এই মানসিকতা পোষণকারীদের ঈমান-ইসলামের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
৯. ঈমান পরীক্ষার উপায়
মানুষের জন্য ঈমানের চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত নেই। এই নেয়ামতের কারণে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে, আল্লাহ তাআলার শোকরগোযারী করবে এবং এর সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী মেহনত করবে।সকাল-সন্ধ্যায় মনে-প্রাণে বলবে-
رضيت بالله ربا وبالإسلام دينا وبمحمد نبيا
অর্থ: আমি রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, দীন হিসেবে ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট আর নবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সন্তুষ্ট।
মনে রাখতে হবে, মৌলিকভাবে ঈমান যাচাইয়ের দুইটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়: আমার ঈমান ঠিক আছে কি না। দ্বিতীয় পর্যায়: সবলতা ও দুর্বলতার বিচারে আমার ঈমানের অবস্থান কোথায়।এখানে শুধু প্রথম পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কথা নিবেদন করছি। এর জন্য নিম্নোক্ত উপায়গুলো ব্যবহার করা সহজ:. আমার মধ্যে নিফাক নেই তো?নিফাকের বিভিন্ন প্রকার আছে। এক. বিশ্বাসগত নিফাক। এ প্রবন্ধে এ নিয়েই আলোচনা করা উদ্দেশ্য। বিশ্বাসগত নিফাকের অর্থ, অন্তরে কুফরী মতবাদ বা ইসলাম বিদ্বেষ লালন করেও কথা বা কাজে মুসলিম দাবি করা। বিশ্বাসগত নিফাক হচ্ছে কুফরীর এক কঠিনতম প্রকার। এটা যার মধ্যে আছে সে সরাসরি কাফির। তবে যথাযথ দলীল-প্রমাণ ছাড়া কারো বিষয়ে নিফাকের সন্দেহ করা বা কাউকে নিফাকের অভিযোগে অভিযুক্ত করা জায়েয নয়। হ্যাঁ, যখন কারো কথা বা কাজের দ্বারা নিফাক প্রকাশিত হয়েড়ে, অন্তরে লালিত কুফরী আকীদা ও ইসলাম-বিদ্বেষ জিহবায়ও এসে যায় তখন তো এর বিষয়ে মুসলমানদের সাবধান হতেই হবে এবং সরকারকেও এই লোক সম্পর্কে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।বিশ্বাসগত নিফাকের রূপগুলো কী কী কুরআন কারীমে তা ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো জেনে নিজেকে যাচাই করা উচিত, আমার মধ্যে এসবের কোনো কিছু নেই তো?বিশ্বাসগত নিফাকের বিভিন্ন রূপ আছে। কয়েকটি এই:
* ইসলামী শরীয়ত বা শরীয়তের কোনো বিধানকে অপসন্দ করা।* ইসলামের, ইসলামের নবীর, ইসলামের কিতাবের, ইসলামী নিদর্শনের কিংবা ইসলামের কোনো বিধানের বিদ্রƒপ বা অবজ্ঞা করা।* ইসলামের কিছু বিশ্বাস ও বিধানকে মানা, আর কিছু না মানা।* শরীয়তের কোনো বিধানের উপর আপত্তি করা বা তাকে সংস্কারযোগ্য মনে করা।* ইসলামের কোনো অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীন আকীদা বা বিধানের অপব্যাখ্যা করা।নিজের ইচ্ছা বা পছন্দের কারণে ঈমান ছাড়ছি না তো?
নিজের ইচ্ছা ও চাহিদা, স্বভাব ও রুচি-অভিরুচি, আত্মীয়তা ও সম্পর্কের আকর্ষণ ইত্যাদির সাথে যে পর্যন্ত ঈমানের দাবিসমূহের সংঘর্ষ না হয় ঐ পর্যন্ত ঈমানের পরীক্ষা হয় না। ঐ সকল বিষয়ের দাবি আর ঈমান-আকীদার দাবির মধ্যে একটিকে গ্রহণ করার পরিস্থিতি তৈরি হলেই ঈমানের পরীক্ষা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিই হচ্ছে মুমিনের ঈমানী পরীক্ষার মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলা বান্দার ঈমান পরীক্ষার জন্য, মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য করার জন্য এমনসব পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন এবং দেখেন, পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হয়, কে মিথ্যা, কার ঈমান খাঁটি সাব্যস্ত হয়, কার ঈমান নামকেওয়াস্তে।মুমিনের কর্তব্য, এই পরীক্ষার মুহূর্তে পূর্ণ সতর্ক থাকা। যেহেতু এসব ক্ষেত্রে দুটোকে গ্রহণের সুযোগ নেই তাই অবশ্যই তাকে কোনো একটি দিক প্রাধান্য দিতে হবে। এই প্রাধান্যের ক্ষেত্রে তাকে ঈমানের প্রমাণ দিতে হবে। যদি সে আল্লাহ তায়ালা, রাসূল(সাঃ), হিদায়েতের কিতাব, এবং দীন ও শরীয়তকে প্রাধান্যের মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করে এবং ঈমান ও ঈমানের দাবিসমূহের বিপরীতে নিজের ইচ্ছা ও চাহিদা, স্বভাবগত পচন্দ-অপচন্দ এবং আত্মীয়তা ও সম্পর্কের আকর্ষণ ও দুর্বলতাকে জয় করতে পারে তাহলে সে আল্লাহর কাছে সফল ও ঈমানী পরীক্ষায় কামিয়াব। পক্ষান্তরে যদি সে নিজের স্বভাব, কামনা-বাসনা ও পার্থিব সম্পর্ককে প্রাধান্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে আর এসবের খাতিরে ঈমান ও ঈমানের দাবিসমূহের কোরবান করে তাহলে সে ব্যর্থ ও ঈমানী পরীক্ষায় নাকাম। তার নিশ্চিত জানা উচিত, তার ঈমান শুধু নামকে ওয়াস্তে, অন্তর নিফাক দ্বারা পূর্ণ।কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষায় এই নীতি বারবার উচ্চারিত; মুসলিমের জন্য প্রাধান্যের মানদন্ড হল আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঈমান ও ঈমানের দাবিসমূহ। এটি আল্লাহর পক্ষ হতেই নির্দেশিত। সুতরাং একে যে প্রাধান্যের মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করল না সে কুফরের রাস্তা অবলম্বন করল।আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آَبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ষ قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَঅর্থ: হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাই যদি ঈমানের মোকাবেলায় কুফরিকে পচন্দ করে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে তারাই জালিম। বল, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ তার রাসূল (সাঃ) এবং আল্লাহ তায়লার পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পতœী, তোমাদের সগোষ্ঠি, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ তায়ালার বিধান আসা পর্যন্ত আল্লাহ সত্যত্যাগী স¤প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না। (সূরা আততাওবা ৯,আয়াত : ২৩-২৪)এভাবে ঈমানের এক একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন, দেখবেন, ঈমান ও ইসলামের অর্থই হচ্ছে হেদায়াতকে গোমরাহীর উপর, আলোকে অন্ধকারের উপর, কল্যাণকে অকল্যাণের উপর, তাওহীদকে শিরকের উপর, সুন্নতকে বিদআতের উপর, নেকীকে গোনাহের উপর, আনুগত্যকে বিদ্রোহের উপর, আখিরাতকে দুনিয়ার উপর, ইসলামকে গায়রে ইসলামের উপর, এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অন্য সবার উপর প্রাধান্য দেওয়া।আল্লাহ তায়ালা এারশদ করেন-
قَالُوا لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَى مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ إِنَّمَا تَقْضِي هَذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ষ إِنَّا آَمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَى ষ إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَا ষ وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا ষ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ مَنْ تَزَكَّىঅর্থ: তারা বলল ‘আমাদের কাছে যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর তোমাকে আমরা কিছুতেই প্রাধান্য দিব না। সুতরাং তুমি কর যা তুমি করতে চাও। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার। আমরা নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ তাও ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ তায়ালা শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী। যে তার প্রতিপালকের কাছে অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে তার জন্য তো আছে জাহান্নাম, সেখানে সে মরবেও না বাঁচবেও না এবং যারা তার নিকট উপস্থিত হবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা-স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই, যারা পবিত্র। (সূরা ত্বহা ২০, আয়াত: ৭২-৭৬)আমি সাবীলুল মুমিনীন থেকে বিচ্যুত হচ্ছি না তো?
কুরআন-সুন্নাহ সিরাতে মুসতাকীম ও হেদায়েতের উপর অবস্থিত নাজাতপ্রাপ্ত লোকদের পথকে ‘সাবীললু মুমিনীন’ বলা হয়েছে এবং এ পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الۡهُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِهٖ جَهَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًاঅর্থ: কারো কাছে সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর তা কত মন্দ আবাস! (আন নিসা ৪, আয়াত : ১১৫)
এ কারণে নিজের ঈমান যাচাইয়ের সহজ পথ, নিজের আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা এবং জীবন ও কর্ম নিরীক্ষা করা। যদি এতে কোনো কিছু ‘সাবীলুল মুমিনীন’ (মুমিনদের ঐকমত্যপূর্ণ রস্তা)-এর বিপরীত চোখে পড়ে তাহলে খাঁটি দিলে তওবা করে শুযূয ও বিচ্ছিন্নতা থেকে ফিরে আসব এবং ‘সাবীলুল মুমিনীনে’ চলতে থাকব। যার দ্বিতীয় নাম ‘মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী’। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঐ রাস্তার উপর দৃঢ়পদ রাখুন। আমীন।رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُআমার মাঝে কোনো কুফরী আকীদা নেই তো?
আমাদেরকে ইসলামী আকাইদ সঠিকভাবে জানতে হবে এবং চিন্তা করতে হবে আমার মধ্যে ঐসব আকীদার পরিপন্থী কোনো কিছু নেই তো? যদি থাকে তাহলে আমাকে তৎক্ষণাৎ তাওবা করতে হবে এবং ইসলামী আকীদার পরিপন্থী এই মতবাদকে বাতিল ও কুফরী বিশ্বাস করে এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে।কুরআন কারীমে মুশরিকদের, আখিরাতে অবিশ্বাসীদের, ইহুদি, নাসারা, মুনাফিকদের, পার্থিবতাবাদী, বেদ্বীন,ইাস্তিকচক্রসহ সকল ভ্রান্ত মতবাদের খন্ডন বিদ্যমান রয়েছে। চিন্তা-ভাবনার সাথে কুরআন তিলাওয়াত করে কিংবা কোনো নির্ভরযোগ্য তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তাফসীরের সাহায্যে কুরআন পাঠ করে এবং প্রয়োজনে কোনো আলিমের কাছে সবক পড়ে কাফিরদের প্রত্যেক শ্রেণীর বাতিল আকীদা সম্পর্কে জেনে নিজেদের বোধ-বিশ্বাসের পরীক্ষা নেয়া কর্তব্য যে, আমার মধ্যে ঐসবের কোনো কিছু নেই তো?
পচন্দ-অপচন্দের ক্ষেত্রে আমার নীতি উল্টা না তো?
জগতে পচন্দ-অপচন্দের অনেক মানদন্ড আছে। মানুষের স্বভাবটাই এমন যে, এতে সৃষ্টিগতভাবেই কিছু বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে আর কিছু বিষয়ে অনাগ্রহ ও বিমুখতা বরং ঘৃণা ও বিদ্বেষ। কিন্তু কেউ যখন ইসলাম কবুল করে এবং ঈমানের সম্পদ লাভ করে তখন তার হাতে এসে যায় পচন্দ-অপচন্দের প্রকৃত মানদন্ড। সে মানদন্ড হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও তাঁর প্রদত্ত শরীয়ত। সুতরাং যা কিছু আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলে (সাঃ) কাছে পচন্দনীয় এবং শরীয়তে কাম্য তা মুমিনের কাছে অবশ্যই পসন্দনীয় হবে যদিও অন্য কোনো মানদন্ডে লোকেরা তা পসন্দ না করুক, কিংবা স্বয়ং তার কাছেই তা স্বভাবগতভাবে পচন্দের না হোক। আর যা কিছু আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূলের কাছে অপচন্দের এবং শরীয়তে নিষিদ্ধ তা তার কাছে অবশ্যই অপচন্দনীয় হবে যদিও অন্য কোনো মানদন্ডে লোকেরা তা পসন্দনীয় মনে করে কিংবা স্বভাবগতভাবে তার নিজেরও ঐ বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ থাকে। মুমিন সর্বদা নিজের পচন্দ-অপচন্দকে দ্বীন ও ঈমানের দাবির অধীন রাখে। সে তার স্বভাবের আকর্ষণকে আল্লাহ তাআলার রেযামন্দির উপর কোরবান করে।এজন্য ঈমান যাচাইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় যে, নিজের অন্তরকে পরীক্ষা করা তাতে পচন্দ-অপচন্দের মানদন্ড কী। আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও শরীয়তের পচন্দ-অপচন্দ, না প্রবৃত্তির চাহিদা, নিজের গোত্র, দল, দলনেতা, পার্থিব বিচারে মর্যাদাবান শ্রেণী, শুধু শক্তির জোরে প্রবল জাতিসমূহের সংস্কৃতি, সাধারণের মতামত, পার্থিব জীবনের চাকচিক্য কিংবা এ ধরনের আরো কোনো কিছু?যদি তার কাছে মানদন্ড হয় প্রথম বিষয়টি তাহলে আল্লাহ তায়ালার শোকর গোযারী করবে আর যদি মানদন্ড হয় দ্বিতীয় বিষয়গুলো তাহেল খালিস দিলে তওবা করবে। নিজের পচন্দকে আল্লাহ ও তাঁর বিধানের অধীন করবে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ)ও তাঁর উসওয়ায়ে হাসানার (শরীয়ত ও সুন্নতের) অনুগামী করবে এবং ঈমানের তাজদীদ ও নবায়ন করবে।আল্লাহ তায়ালার পচন্দকে অপচন্দ করা কিংবা আল্লাহ তায়ালার অপচন্দকে পচন্দ করা অথবা আল্লাহ তায়লার বিধান অপচন্দকারীদের আংশিক আনুগত্য করা, এসবকে কুরআনে হাকীমে আল্লাহ তাআলা মুরতাদ হওয়ার কারণ সাব্যস্ত করেছেন এবং বলেছেন এগুলোর কারণে বান্দার সকল আমল নষ্ট হয়ে যায়।আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آَيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَঅর্থ: মুশরিক নারীকে ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও, নিশ্চয়ই মুমিন কৃতদাসী তাদের অপেক্ষা উত্তম। ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষদের সাথে তোমরা বিবাহ দিও না, মুশরিক পুরুষ তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও, মুমিন কৃতদাস তাদের অপেক্ষা উত্তম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করে এবং আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহে নিজ জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন। তিনি মানুষের জন্য স্বীয় বিধান সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। (আলবাকারা ২, আয়াত : ২২১)وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ ষ وَلَا تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَأَوْلَادُهُمْ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُعَذِّبَهُمْ بِهَا فِي الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنْفُسُهُمْ وَهُمْ كَافِرُونَ
অর্থ: তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত আদায় করবে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ ও তার রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তোমাকে যেন মুগ্ধ না করে। আল্লাহ তায়াল তো এর দ্বারাই পার্থিব জীবনে শান্তি দিতে চান; তারা কাফির থাকা অবস্থায় তাদের আত্মা দেহ ত্যাগ করবে। (আততাওবা ৯, আয়াত: ৮৪-৮৫).আল্লাহকে হাকিম ও বিধানদাতা মেনে নিতে আমার মনে কোনো দ্বিধা –নাউযুবিল্লাহ- নেই তো?এক তো হচ্ছে বর্তমানকালের বাস্তবতা যা আমাদেরই কর্মফল যে, ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশ এমন নেই যেখানে রাষ্টীয়ভাবে ইসলামী বিধান কার্যকর, কিন্তু মুমিনমাত্রের জানা আছে যে, মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অবস্থা এ নয়, মুসলিম উম্মাহ তো পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও শরীয়তের অধিকারী। যাতে বড় একটি অংশ রয়েছে রাজ্য-শ্বাসন বিষয়ক। উম্মাহর নেতৃত্ব ও পরিচালনা যাদের উপর ন্যস্ত তাদের ফরয দায়িত্ব ঐ নীতি ও বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, আমর বিল মারূফ, নাহি আনিল মুনকার (সকল মন্দের প্রতিরোধ ও প্রতিাবদ), ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ও ‘খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওয়াহ’ (নববী আদর্শ অনুযায়ী যমীনে খেলাফত পরিচালনা করা)-এর দায়িত্ব পালন করা, ইসলামী হদ, কিসাস ও তাযীর (দন্ডবিধি) কার্যকর করা, সাধ্যানুযায়ী ইসলামী জিহাদের দায়িত্ব পালন করা, রাষ্ট্র পরিচালনা (আইন-বিচার, নির্বাহী) এর ক্ষেত্রে নতুন-পুরাতন জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান এবং নতুন-পুরাতন সকল তাগূতি ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণরুপে মুখ ফিরিয়ে ইসলামী বিধি-বিধানের আনুগত্য করা। এ হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা এবং এ হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত অবস্থা :.আমার অন্তরে অন্যদের শাআইরের প্রতি ভালবাসা নেই তো?
ইসলাম ছাড়া অন্য সব ধর্ম এবং দ্বীন ও আখিরাত-অস্বীকার সম্বলিত সকল ইজম সম্পূর্ণ বাতিল ও ভ্রান্ত। এদেরও ‘শাআইর’ ও নিদর্শন আছে, মিথ্যা উপাস্য ও আদর্শ আছে, যেগুলোর কোনো সারবত্তা নেই। কিন্তু ইসলাম এই সবের উপহাস ও কটুক্তিরও অনুমতি নিজ অনুসারীদের দেয় না। এক তো এ কারণে যে, তা ভদ্রতা ও শরাফতের পরিপন্থী, এছাড়া এজন্যও যে, একে বাহানা বানিয়ে এরা ইসলামের সত্য নিদর্শনের অবমাননা করবে। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ كَذَلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ مَرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَঅর্থ: আল্লাহকে ছেড়ে তারা যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। কেননা তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গালি দিবে; এভাবে আমি প্রত্যেক জাতির দৃষ্টিতে তাদের কার্যকলাপ সুশোভন করেছি অতঃপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন। অনন্তর তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকার্য সম্বন্ধে অবহিত করবেন। (আল আনআম ৬, আয়াত: ১০৮).
দল ও দলনেতা আখেরাতে কাজে আসবে নাযে কেউ দুনিয়াতে ‘সাবীলুল মুমিনীন’ থেকে আলাদা থাকবে সে আখেরাতে আফসোস করতে থাকবে:وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا ষ يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا ষ لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُولًاঅর্থ: জালিম ব্যক্তি সেইদিন নিজ হস্তদয় দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম! হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম, আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ আসার পর। শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক। (সূরা আল ফুরকান ২৫, আয়াত: ২৭-২৯)إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا ষ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا ষ يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا ষ وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا ষ رَبَّنَا آَتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًاঅর্থ: আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জ্বলন্ত অগ্নি সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তারা কোন অভিভাবক এবং সাহায্যকারী পাবে না যেদিন তাদের মুখমন্ডল আগুনে উলট-পালট করা হবে সেদিন তারা বলবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম ও রাসূলকে মানতাম!’ তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদেরকে দাও মহাঅভিসম্পাত। (সূরা আল আহযাব ৩৩, আয়াত: ৬৪-৬৮)কিন্তু জবাব পাওয়া যাবে যে,قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَكِنْ لَا تَعْلَمُونَঅর্থ: আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না। (সূরা আলআ’রাফ ৭, আয়াত: ৩৮)এবং নেতারা বলবে:فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْسِبُونَঅর্থ: আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন কর। (সূরা আল আরাফ ৭, আয়াত: ৩৯). শাআইরে ইসলামের বিষয়ে আমার অবস্থান কী?শাআইরে ইসলামকে ‘শাআইর’ এজন্য বলা হয় যে, তা ইসলামের চিহ্ন। প্রধান ‘শাআইর’ এই: এক. ইসলামের কালিমা, দুই. আল্লাহ তায়ালার ইবাদত (বিশেষত নামায, যাকাত, রোযা, হজ্ব) তিন. আল্লাহর রাসূল, চার. আল্লাহর কিতাব, পাঁচ. আল্লাহর ঘর কা’বা, অন্যান্য মসজিদ ও ইসলামের অন্যান্য পবিত্র স্থান, বিশেষত মসজিদে হারাম, মিনা, আরাফা, মুযদালিফা, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববী। ছয়. হজ্বে কুরবানীর জন্য নির্ধারিত ঐ পশু, যাকে ‘হাদী’ বলে। কুরআন মজীদে (২২: ৩২, ৩০) আল্লাহ তাআলা ইসলামের শাআইর (নিদর্শনাবলী) কে ‘শাআইরুল্লাহ’ ও ‘হুরুমাতুল্লাহ’ নামে ভূষিত করেছেন। এবং এই নিদর্শনগুলোর মর্যাদা রক্ষার আদেশ করেছেন। আর ইরশাদ করেছেন, এগুলোর মর্যাদা রক্ষা প্রমাণ করে, অন্তরে তাকওয়া আছে, আল্লাহ তায়ালার ভয় আছে।নিজের ঈমান যাচাইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায় এই যে, আমি আমার অন্তরে খুঁজে দেখি, নিজের কথা ও কাজ পরীক্ষা করে দেখি আমার মাঝে শাআইরে ইসলামের ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে কি না। তদ্র্রূপ কেউ শাআইরুল্লাহর অবমাননা করলে আমার কষ্ট হয় কি না। এমন তো নয় যে, কেউ শাআইরের অবমাননা করছে, আর আমি একে তার ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে নিরব ও নির্লিপ্ত থাকছি? না আমার কষ্ট হচ্ছে, না এই অশোভন আচরণ সম্পর্কে আমার মনে ঘৃণা জাগছে, আর না এই বেআদবের বিষয়ে আমার অন্তরে কোনো বিদ্বেষ, না তার থেকে ও তার কুফরী কার্যকলাপ থেকে বারাআত (সম্পর্কচ্ছেদের) কোনো প্রেরণা!আল্লাহ তায়ালা না করুন, শাআইরের বিষয়ে এই যদি হয় আচরণ-অনুভূতি তাহলে ঐ সময়ই নিশ্চিত বুঝে নিতে হবে, এ অনÍর ঈমান থেকে একেবারেই শূন্য। সাথে সাথে সিজদায় পড়ে যাওয়া উচিত এবং তওবা করে, সর্বপ্রকার কুফর ও নিফাক থেকে ভিন্নতা ঘোষণার মাধ্যমে ঈমানের নবায়ন করা উচিত।. ঈমান অতি সংবেদনশীল, মুমিন ও গায়রে মুমিনের মিশ্রণ তার কাছে সহনীয় নয়ইসলাম পূর্ণাঙ্গ দ্বীন, ঈমানের বিষয়টি অতি নাজুক ও সংবেদনশীল। ইসলাম এটা বরদাশত করে না যে, মুসলিম উম্মাহ অন্য কোনো জাতির মাঝে বিলীন হয়ে যাবে কিংবা অন্যদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাবে। ইসলাম তার অনুসারীদের যে পূর্ণাঙ্গ শরীয়ত দান করেছে তাতে এমন অনেক বিধান আছে, যার তাৎপর্যই হচ্ছে, মুসলিমের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং অন্যদের থেকে স্বাতন্ত্রমন্ডিত হওয়া। যেমনটা সে স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রের অধিকারী চিন্ত-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের বিধি-বিধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বেশভূষা, আনন্দ-বেদনা, পর্ব-উৎসব, সংস্কৃতি ও জীবনাচার বিষয়ে শরীয়তের আলাদা অধ্যায় ও আলাদা বিধিবিধান আছে, যার দ্বারা জাতি হিসেবে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র ও স্বকীয়তা সৃষ্টি হয়। বাস্তব ক্ষেত্রে এই বিধানগুলোর অনুসরণ প্রত্যেক মুমিনের জন্য জরুরি। আর এগুলোকে সত্য বলে মানা এবং অন্তর থেকে পছন্দ করা তো ঈমানের অংশ।তন্মধ্যে অমুসলিমের সাথে সম্পর্কের ধরন বিষয়ক যে সকল বিধান আছে, তা বিশেষভাবে মনোযোগের দাবিদার। তার মধ্যে একটি হুকুম হল, অমুসলিমদের পর্ব-উৎসব থেকে দূরে থাকা এবং তাদের ধর্মীয় নিদর্শনের প্রতি কোন ধরনের সম্মান প্রদর্শন থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকা। তাছাড়া মুয়ালাত ও বারাআতের মৌলিক বিধান তো উপরে বলা হয়েছে, এখানে সে বিষয়ক শুধু দু’টি বিধান উল্লেখ করছি: এক. জানাযার নামায, দুই. মাগফিরাতের দুআ। এই দুই বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা এই যে, কোনো অমুসলিমের জানাযার নামায পড়া যাবে না এবং কোনো অমুসলিমের জন্য মাগফিরাতের দুআ করা যাবে না। সে অমুসলিম পিতা হোক বা ভাই, উস্তাদ হোক বা মুরবিব, নেতা হোক বা লিডার। সীরাতে নববিয়্যাহর দিকে তাকান, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন চাচা আবু তালিবের জানাযার নামায পড়াননি অথচ তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে কতইনা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। সীরাত-তারীখ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান রাখেন এমন যে কারো তা জানা আছে। এত সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা এবং এত নিকটাত্মীয়তা সত্তে¡ও না তার জানাযা পড়ছেন, না তার জন্য দুআয়া মাগফিরাত করেছেন।এ বিষয়ে সকল নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম ঘটনাবলি এত প্রচুর যে, তা আলাদা গ্রন্থের বিষয়। এখানে মাসআলার সাথে সংশ্লিষ্ট শুধু দু’টি আয়াত দেখুন:وَلَا تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَى قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونঅর্থ তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনও তার জানাযার সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না; তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। (আত তাওবা ৯, আয়াত: ৮৪)مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ ষ وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌঅর্থ: আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী এবং মুমিনদের জন্য সংগত নয়, যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী। ইবরাহীম তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল বলে; অতঃপর যখন তাঁর কাছে এটা সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শত্রæ তখন ইবরাহীম তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল। ইবরাহীম তো কোমলহৃদয় ও সহনশীল। (আত তাওবা ৯, আয়ত: ১১৩-১১৪)তওবার দরজা খোলা আছেমওত হাজির হলে তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই সংশোধনের সময়, খাঁটি তওবা করলে আল্লহ তাআলা কুফর-শিরক ও নিফাকসহ বড় বড় অপরাধও মাফ করে দেন। শর্ত হচ্ছে, ‘তাওবায়ে নাসূহ’ খালিস তওবা, যে তওবাতে সকল প্রকার কুফর শিরক মুনাফেকী বর্জনের পাশাপাশি সকল প্রকার গুনাহ থেকে বাচার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও কর্ম সংশোধন এবং সাধ্যমত অতীত জীবনের ক্ষতিপূরণও শামিল :يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا ষ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا ষ إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا ষ مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآَمَنْتُمْ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًاঅর্থ: হে মুমিনগণ! মুমিনগণের পরিবর্তে কাফিরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহকে তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও? মুনাফিকগণ তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য কখনো কোন সহায় পাবে না। কিন্তু যারা তওবা করে, নিজেদেরকে সংশোধন করে, আরøাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাদের দ্বীনে একনিষ্ঠ থাকে, তারা মুমিনদের সঙ্গে থাকবে এবং মুমিনগণকে আল্লাহ অবশ্যই মহাপুরস্কার দিবেন। তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমান আন তবে তোমাদের শাস্তিতে আল্লাহর কি কাজ? আল্লাহ পুরস্কারদাতা সর্বজ্ঞ। (সুরা আননিসা ৪, আয়ত: ১৪৪-১৪৭)ইয়া আল্লাহ! আমরা অন্তর থেকে ঈমান আনছি এবং আপনার শোকর আদায় করছি। আপনি কবুল করুন। আমীন ইয় রব্বাল আলামীন
ইসলামিক
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করুন সুদ পরিহার করুন
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
বর্তমানকালে সুদ সম্পর্কিত লেনদেন ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি বিরাট অংশ জুড়ে পসিদ্ধ হয়ে গেছে। বড় আকারের প্রায় সকল ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভরশীল হয়ে গেছে সুদী লেনদেনের উপর। এ কারণে সুদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বর্ণনাগুলো যখন সামনে আসে তখন তা বুঝতে, বুঝাতে এবং মেনে নিতে অনেকের মনে দ্বিধা-সংশয়ের সৃষ্টি হয়। অনেকে এক্ষেত্রে নানা রকম কৌশলের আশ্রয় নিতে চেষ্টা করেন। এটা কোনো মুমিন-মুত্তাকীর জন্য আদর্শ পন্থা নয়। সুতরাং সকলের উচিত আল্লাহ তাআলার ভয়কে মাথায় রেখে পরকালের কথা চিন্তা করে ঠান্ড মাথায় বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করা, এর গুরত্ব উপলব্ধি করা এবং পবিত্র কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা শিরোধার্য করে নিয়ে নিজেদের কর্মজীবনের গতিপথ নির্ণয় করা এবং পরকালের পথ সুগম করা।
আরবী ভাষায় সুদের প্রতিশব্দ রিবা। বাংলাভাষায় ‘সুদ’ শব্দটি যেমন সুপরিচিত, তেমনি আরবী ভাষায়ও ‘রিবা’ শব্দের ব্যবহার বহুলপ্রচলিত। রাসূলে কারীম (সাঃ )এর নবুওত লাভ এবং কুরআন কারীম অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আরবের জাহেলী যুগেও ‘রিবা’ শব্দটি প্রচলিত ছিল। শুধু তাই নয়, সে সময় রিবা অর্থাৎ সুদের লেনদেনও চালু ছিল। সূরা নিসার আয়াত থেকে জানা যায় যে, হযরত মূসা (আঃ) এর যুগেও ইহুদীদের মধ্যে সুদের লেনদেনের রেওয়াজ ছিল এবং মূসা (আঃ) এর নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রেরিত গ্রন্থ তাওরাতেও ‘রিবা’ অর্থাৎ সুদের লেনদেনকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ইসলাম রিবা’র নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে কেবল নৈতিক বিবেচনার অধীনে রাখেনি; বরং তাকে পুরোপুরি আইনের মর্যাদা দিয়েছে। এ বিষয়ে বিদায় হজে নবী (সাঃ) ঐতিহাসিক ভাষণের সংশিষ্ট অংশটুকু বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন-
أَلَا كُلّ شَيْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيّةِ تَحْتَ قَدَمَيّ مَوْضُوعٌ،... وَرِبَا الْجَاهِلِيّةِ مَوْضُوعٌ، وَأَوّلُ رِبًا أَضَعُ رِبَانَا رِبَا عَبّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطّلِبِ، فَإِنّهُ مَوْضُوعٌ كُلّهُ
অর্থ: সাবধান! জাহেলিয়্যাতের প্রত্যেক বিষয় আমার দু’পায়ের নীচে।... জাহেলীযুগের ‘রিবা’ বাতিল। আর প্রথম রিবা, যা আমরা বাতিল করছি তা আমাদের রিবা; আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের রিবা। তা পুরোটাই বাতিল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২১৮)
বর্তমান পৃথিবীতে দু’ধরনের সুদী লেনদেন বেশি প্রচলিত। এক মহাজনী সুদ, অর্থাৎ কেউ কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কারও নিকট থেকে ঋণ নিলে এর বিপরীতে ঋণের অতিরিক্ত যে অর্থ নেওয়া হয়। দুই. বাণিজ্যিক সুদ, যা কোনো উৎপাদনমূলক কাজে গৃহীত ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনা- সর্বপ্রকার সুদ হারাম। কেউ কেউ প্রতারণা করে বলে থাকেন যে, পবিত্র কুরআনে যে ‘রিবা’ তথা সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার দ্বারা প্রথম প্রকারের সুদ অর্থাৎ মহাজনী সুদ উদ্দেশ্য, যা কোনো সাময়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে গৃহীত ঋণের বিপরীতে নেওয়া হয়। তারা এই ধোঁকার ভিত্তি রেখেছে আরেক মিথ্যা দাবির উপর। তারা বলে, কেবল এ ধরনের সুদই নাকি রাসূলে কারীম (সাঃ) এর যুগে এবং পূর্ববর্তী জাহেলী যুগে প্রচলিত ছিল। তাই এরূপ সুদকেই কুরআনে কারীমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমান যুগে প্রচলিত বাণিজ্যিক সুদ এর রেওয়াজ এবং লেনদেন নাকি সে যুগে ছিল না। সুতরাং তাদের ধারণা মতে এরূপ সুদ কুরআনে কারীমে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।
আরও অনেক ইতিহাসে পাওয়া যায়। অতএব কুরআনে কারীমে সুদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা সর্বপ্রকার সুদের ক্ষেত্রে প্রযাজ্য, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এখন আমরা দেখি, সুদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কারীমের ভাষ্য-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ اِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوْسُ اَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُوْنَ وَ لَا تُظْلَمُوْنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তাওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা (কারও প্রতি) জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতিও জুলুম করা হবে না। (সূরা বাকারা-আয়াত: ২৭৮-২৭৯)
اَلَّذِیْنَ یَاْكُلُوْنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوْمُوْنَ اِلَّا كَمَا یَقُوْمُ الَّذِیْ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیْطٰنُ مِنَ الْمَسِّ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ قَالُوْۤا اِنَّمَا الْبَیْعُ مِثْلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللهُ الْبَیْعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا فَمَنْ جَآءَهٗ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّهٖ فَانْتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ وَ اَمْرُهٗۤ اِلَی اللهِ وَ مَنْ عَادَ فَاُولٰٓىِٕكَ اَصْحٰبُ النَّارِ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ
অর্থ: যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এজন্য যে, তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। যার নিকট তার প্রতিপালকের উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, তবে অতীতে যা হয়েছে তা তারই। আর তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। আর যারা পুনরায় করবে তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। (সূরা বাকারা-আয়াত: ২৭৫)
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِیْنَ هَادُوْا حَرَّمْنَا عَلَیْهِمْ طَیِّبٰتٍ اُحِلَّتْ لَهُمْ وَ بِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ كَثِیْرًا وَّ اَخْذِهِمُ الرِّبٰوا وَ قَدْ نُهُوْا عَنْهُ وَ اَكْلِهِمْ اَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَ اَعْتَدْنَا لِلْكٰفِرِیْنَ مِنْهُمْ عَذَابًا اَلِیْمًا
অর্থ: ভালো ভালো যা ইহুদীদের জন্য বৈধ ছিল আমি তা তাদের জন্য অবৈধ করেছি; তাদের সীমালংঘনের জন্য, আল্লাহর পথে অনেককে বাধা দেওয়ার জন্য এবং তাদের সুদ গ্রহণের জন্য, যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল; এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। (সূরা নিসা-আয়াত: ১৬০-১৬১)
یَمْحَقُ اللهُ الرِّبٰوا وَ یُرْبِی الصَّدَقٰتِ وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ اَثِیْمٍ
অর্থ: আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না। (সূরা বাকারা-আয়াত: ২৭৬)
এরপর সুদের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে রাসূলে কারীম (সাঃ) এর হাদীসসমূহ উল্লেখ করা হচ্ছে :
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، - وَاللَّفْظُ لِعُثْمَانَ - قَالَ إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا وَقَالَ، عُثْمَانُ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مُغِيرَةَ، قَالَ سَأَلَ شِبَاكٌ إِبْرَاهِيمَ فَحَدَّثَنَا عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ قَالَ قُلْتُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ قَالَ إِنَّمَا نُحَدِّثُ بِمَا سَمِعْنَا
অর্থ: উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ’আবদুল্লাাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরের প্রতি ও সুদদাতার প্রতি। রাবী বলেন, আমি বললামঃ এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষী দু’জনের প্রতিও। তিনি বললেন, আমরা কেবল তাই বর্ণনা করি যা আমরা শুনেছি। (সহীহ মুসলিম-হাদিস:১৫৯৭)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ اجْتَنِبُوْا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّيْ يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
অর্থ: আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা (২) যাদু (৩) আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করা (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের মাল গ্রাস করা (৬) রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং (৭) সরল স্বভাবা সতী-সাধ্বী মু’মিনাদের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী-হাদীস: ২৭৬৬)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَعُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، قَالُوا حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا أَبُو الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
অর্থ: মুহাম্মাদ ইবনু সাববাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) .. জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (সহীহ মুসলিম-হাদিস:১৫৯৮)
এ ছাড়াও আরও অসংখ্য হাদীসে সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের সাথে কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
এই ভয়াবহতম হারাম কর্মটিকেই এখন বানিয়ে ফেলা হয়েছে অতি উপাদেয় একটি বিষয়। মতলববাজ লোকেরা সকল শ্রেণির মুসলমানদের এতে জড়ানোর জঘন্যতম কাজটি করে যাচ্ছে বিনা বাধায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাকওয়া ও হেদায়েতের পথে চলার তাওফীক দান করুন।আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
ইসলামিক
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
মুমিনরাই এক মাত্র আল্লাহ তায়লার কাছে মর্যদাশীল, কুরআনের অনেক জায়গায় মুমিনদের বিশেষ একটি গুন উল্লেখ করা হয়েছে, য়ে তারা নামাজ কজায়েম করে। যেমন আল্লাহ এরশাদ করেন-
طٰسٓ تِلْكَ اٰیٰتُ الْقُرْاٰنِ وَكِتَابٍ مُّبِیْنٍ هُدًی وَّبُشْرٰی لِلْمُؤْمِنِیْنَ الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَیُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ
অর্থ: ত্ব-সীন। এ কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত, মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও সুসংবাদ, যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং তারা আখেরাতে দৃড় বিশ্বাস রাখে। (সূরা নামল, আয়াত:১-৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَ اِلَّا عَلٰۤی اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُم فَاِنَّهُمْ غَیْرُ مَلُوْمِیْنَ فَمَنِ ابْتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْعٰدُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ عَلٰی صَلَوٰتِهِمْ یُحَافِظُوْنَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْوٰرِثُوْنَ الَّذِیْنَ یَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ
অর্থ: নিশ্চয় সফল কাম হয়েছে মুমিনগন যারা তাদের নামাযে বিনীত , যারা অহেতুক কথা থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত আদায়কারী, যারা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তবে নিজেদের স্ত্রী বা মালিকানাধীন দাসীদের থেকে নয়, কেননা (এতে) তারা নিন্দনীয় হবে না। আর আর যারা এছাড়া (অন্য পথ) অন্দেষন করে তারাই সীমালঙ্ঘন কারী এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের নামাজসমূহের প্রতি যত্নবান থাকে, তারাই উত্তরাধিকার লাভকারী, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তুরাধিকার লাভ করবে, তারা তাতে সর্বদা থাকবে। (সূরা মুমিন, আয়াত: ১-১১)
পূর্ববর্তী নবীদের নামজের প্রতি নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে যেভাবে বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, ওরকুম ভাবে পূর্ববর্তী নবীদেরকে কিছু বিষয় নির্দেশ দিতেন। আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি নামাজ ও ওসব বিষয়ের অন্যতম, যার বিধান আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য নবীদেরকে ও দান করেন।
মুসা (আঃ) মাদইয়ান থেকে সহপরিবার মিসরের উদ্দেশ্য রওনা হলেন, পথে আগুন দেখতে পেয়ে তিনি কাছে এলেন, (আসলে এটা জাগতিক আগুন ছিল না, এটা ছিল আল্লাহর নূর) কাছে আসার পর আল্লাহ তায়ালা উনাকে ডেকে বললেন-
اِنِّیْۤ اَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَیْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًی وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا یُوْحٰی اِنَّنِیْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِیْ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِیْ
অর্থ: নিশচয় আমি তোমাদের প্রতিপালক, সুতারং তোমার জুতা খুলে ফেল, কেননা তুমি পবিত্র ”তুওয়া” উপত্যকায় রয়েছ। আর আমি তোমাকে মনোনীত করছি, সুতারং ওহীর মাধ্যমে তোমাকে যা বলা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, সুতারং আমারই ইবাদত কর এবং আমার স্বরণের জন্য নামাজ কায়েম কর। (সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২-১৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহীম (আঃ) ইসহাক (আঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর সম্পর্কে বলেন-
وَجَعَلْنٰهُمْ اَىِٕمَّةً یَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَیْنَاۤ اِلَیْهِمْ فِعْلَ الْخَیْرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوةِ وَاِیْتَآءَ الزَّكٰوةِ وَكَانُوْا لَنَا عٰبِدِیْنَ
অর্থ: আমি তাদের বানিয়েছিলাম নেতা, যারা আমার নির্দেশে (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করত। আমি ওহির মাধ্যমে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলাম সৎকর্ম করতে, নামাজ কায়েম করতে, এবং যাকাত আদায় করতে, আর তারা আমারই ইবাদতকারী ছিল। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَاَوْحَیْنَاۤ اِلٰی مُوْسٰی وَاَخِیْهِ اَنْ تَبَوَّاٰ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُیُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُیُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ
অর্থ: আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি ওহী নাযিল করলাম যে, তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরে ঘর-বাড়ি কর, এবং নামাজ কায়েম কর আর মুমিনদেও সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৭)
আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈলকে নামাজের বিধান দেওয়ার বিষয়টি কুৃরআন কারীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন-
وَلَقَدْ اَخَذَ اللهُ مِیْثَاقَ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَیْ عَشَرَ نَقِیْبًا وَقَالَ اللهُ اِنِّیْ مَعَكُمْ لَىِٕنْ اَقَمْتُمُ الصَّلٰوةَ وَاٰتَیْتُمُ الزَّكٰوةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِیْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّاُكَفِّرَنَّ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَلَاُدْخِلَنَّكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ فَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیْلِ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে আমি বারজন নেতা নির্ধারিত করেছিলাম, আর আল্লাহ বলেছেন নিশ্চয় আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা নামাজ আদায় কর, যাকাত আদায় কর, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদের সম্মান কর, এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে অবশ্যয় আমি তোমাদের পাপসমূহ মোসন করব, এবং তোদেরকে এমন উদ্যানসমূহে প্রেবেশ করাব, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত। আর এর পরও তোমাদের মধ্যে যে কুফর অবলম্বন করবে, নিশ্চয় সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। (সূরা মায়েদা, আয়াত: ১২)
নামাজ না পড়ার শাস্তি
নামাজ না পড়লে শুধু পারকালেই নয়, দুনিয়ার জীবনেও নেমে আসে অশান্তি, হতাশা, অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট। যে নামাজ আদায় কওে না তার চেহারায় নূর ও উজ্জ্বলতা থাকে না। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
فِیْ جَنّٰتٍ ۛیَتَسَآءَلُوْنَ، عَنِ الْمُجْرِمِیْنَ، مَا سَلَكَكُمْ فِیْ سَقَرَ، قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّیْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِیْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآىِٕضِیْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِیَوْمِ الدِّیْنِ، حَتّٰۤی اَتٰىنَا الْیَقِیْنُ
অর্থ: তারা জান্নাতে থাকবে, তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপারাধীদের সম্পর্কে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করছে? তারা বলবে আমরা নামাজিদের আন্তর ভুক্ত ছিলাম না। আমরা মিসকীনদের খাওয়াতাম না, আর (আসার) আলাফে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে আমরা ও তাতে লিপ্ত হতাম, এবং আমরা বিচার দিবসকে অস্বীকার করতাম, পরিশেষে নিশ্চিত বিষয় আমাদেও কাছে এসে গেল। (সূরা মদ্দাসসির, আয়াত:৪০-৪৭)
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقٰتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ وَلَا یَاْتُوْنَ الصَّلٰوةَ اِلَّا وَهُمْ كُسَالٰی وَلَا یُنْفِقُوْنَ اِلَّا وَهُمْ كٰرِهُوْنَ
অর্থ: তাদের দান কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এটা যে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে এবং তারা নামাজে আসে (চরম) আলসতার সথে এবং তারা ব্যয় করে (খুব) অনিচ্ছার সাথে।
اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ ۚ وَاِذَا قَامُوْۤا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا كُسَالٰی یُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیْلًا.
অর্থ: নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সথে ধোঁকাবাজি করে, অতচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ান, তারা মানুষকে দেখায় আর আল্লাহকে খুব সামান্যই স্বরণ করে। (সূরা নিসা, আয়াত ১৪২)
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ، الَّذِیْنَ هُمْ یُرَآءُوْنَ، وَیَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ۠
অর্থ: দুর্ভোগ সেই নামাজীদের, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন, যারা মানুষকে দেখায় এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসও দেয় না। (সূরা মাঊন, আয়াত: ৪-৭)
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কাফেরদেও অনেক ভর্ৎসনা করেছেন, এক জায়গা তাদের নিন্দা করেছেন-
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى، وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى، ثُمَّ ذَهَبَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ یَتَمَطّٰى، اَوْلٰى لَكَ فَاَوْلٰى، ثُمَّ اَوْلٰى لَكَ فَاَوْلٰى
অর্থ: সে বিশ্বাস করেনি এবং নামাজ পড়েনি, বরং অস্বীকার করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতঃপর সে দম্ভ করতে করতে তার পরিবারের কাছে চলে গেছে, দুর্ভোগ তোমাদের জন্য দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ ,অতঃপর দুর্ভোড়গ তোমার জন্য, দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ৩১-৩৫)
(আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নামাজের যত্নবান হওয়ার তাওফীক দান করুন আমীন।)
ইসলামিক
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
১.ইখলাস বা একনিষ্টতা:
ইখলাস সব আমলের জন্য প্রয়োজন ইখলাস বিহিন কোন আমল কবুল হয় না, তেমনি নামাজের জন্য ইখলাস আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ وَيُقِيْمُوْا لصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ
অর্থ: এবং তাদেরকে এছাঢ়া কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা একনিষ্টভাবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এবং নামাজ কায়েম করবে, এবং যাকাত আদায় করবে, আর এটাই হল সরল দ্বিন। (সূরা বাইয়েনা, আয়াত: ৫)
২/ বিনয়ের সাথে নামাজ আদায় করা:
যারা সময় মত নামাজ আদাই করে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সফলকাম মুমিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ
অর্থ: নিশ্চয় সফল কাম হয়েছে মুমিনগন যারা তাদের নামাযে বিনীত । (সূরা মুসিন, আয়াত: ১-২)
৩/ একাগ্রতার সহকারে নামাজ আদায় করা:
নামাজে একাগ্রতা খুব জরুরী, অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়া,নামাজে যদি মনোযোগ না থাকে তাহলে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَّمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ
অর্থ: আল্লাহ তায়ালার এবাদত কর এমন ভাবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি দেখতে না।
৪/ রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত অনুসরণ করা:
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى
অর্থ: তোমরা নামাজ আদায় কর ঐভাবে, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখেছ (সহীহ বুখারী, হাদিস:৬৩১)
৫/ উত্তম রুপে অজু করা:
অজু হচ্ছে নামাজের চাবি, আর নামাজ সম্পূর্ণ হওয়ার শর্ত হলো অজু উত্তমরুপে করা।রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ
অর্থ: আমি কি তোমাদেরকে বলব না, আল্লাহ তায়ালা কি দিয়ে গুনা মুছেদেন, এবং মর্যদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবায়েকেরাম বললেন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ ) হ্যা বলেন , রাসূল (সাঃ) বললেন কষ্ট হওয়া সত্তে¡ও উত্তমরুপে অজু করা, মসজিােদও দিগে বেশী বেশী যাতায়েত করা, এবং এক নামাজ শেষ করি পরবর্তী নামাজের জন্য অপেক্ষা করা, আর এটাই রিবাত। (সহীহ মুসলিম,হাদিস:২৫১)
৬/ নিয়মিত নামাজ আদায় করা:
নামাজ নিয়মিত আদায় করতে হবে, শুদু দুই ঈদে বা শুক্রবারে নামাজ আদায় করার বিদান ইসলামে নাই। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
الَّذِيْنَ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُوْنَ
অর্থ: যারা তাদের নামাজ নিয়মিত আদায় করে। (সূরা মা’আরিজ:২৩)
৭/ দাড়িয়ে নামাজ আদায় করা:
যে ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক আছে সে অবশ্যয় দাড়িয়ে নামাজ আদায় করবে, আর যদি অসুস্থ হয় দাড়াই অক্ষম তাহলে সে বসে নামাজ পড়বে, আর যদি বসতে অক্ষম হয় তাহলে শুয়ে নামাজ আদায় করবে।
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ " صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ "
অর্থ: ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার আর্শরোগ ছিল। তাই রাসূল (সাঃ) এর খিদমতে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, রাসূল (সাঃ) বললেন দাড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে, যদি তা ও না পার তাহলে শুয়ে। (সহীহ বুখারী, হাদিস:১১১৭)
৮/ নামাজে তাকবীরে তাহরীমা:
তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাধা ফরজ। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ
অর্থ: হযরত আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন নামাজের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা, ’আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করার দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। আর সালাম ফিরানোর পর পার্থিব সকল কাজ হালাল হয়। (সুনানে অবু দাউদ, হাদিস:৬১)
৯/ নামাজের আহকাম আরকান সুন্দর ভাবে আদায় করা:
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
الصَّلاةُ ثَلاثَةُ أَثْلاثٍ: الطَّهُوْرُ ثُلُثٌ، والرُّكُوْعُ ثُلُثٌ، وَالسُّجُوْدُ ثُلُثٌ فَمَنْ أَدَّاهَا بِحَقِّهَا قُبِلَتْ مِنْهُ وَقُبِلَ مِنْهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَمَنْ رُدَّتْ عَلَيْهِ صَلاتهُ رُدَّ عَلَيْهِ سَائِرُ عَمَلِهِ
অর্থ: নামাজ তিন ভাগে বিভক্ত পবিত্রতা এক তৃতীয়াংশ, রুকু এক তৃতীয়াংশ, জিদা এক তৃতীয়াংশ। সুতারং যে ব্যক্তি তার হক আদায় করবে,তার থেকে তার নামাজ ও সমস্থ আমল কবুল করা হবে। আর যার নামাজ প্রত্যাখ্যান করা হবে, তার সমস্থ আমল প্রত্যাখ্যান করা হবে।
১০/ পেশাব-পায়খানা চাপ নিয়ে নামাজ না পড়া:
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-
لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلاَ وَهُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ
অর্থ: খাদ্য উপস্থিত হলে নামাজ নাই, এবং পেশাব-পাইখানা চাপ থাকলে কোন নামাজ নাই (সহীহ বুখারী,হাদীস:১২৭৪) তবে নামাজ পড়লে তা বাতিল হবে না।
১১/ আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদাই করা:
عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ غَنَّامٍ، عَنْ عَمَّتِهِ أُمِّ فَرْوَةَ، وَكَانَتْ، مِمَّنْ بَايَعَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ " الصَّلاَةُ لأَوَّلِ وَقْتِهَا "
অর্থ: কাসিম ইবনু গান্নাম (রহঃ) হতে তার ফুফু ফারওয়া (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) এর নিকট বাই’আত গ্রহকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি বললেন, আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদাই করা। (সুনানে আত তিরমিজী, হাদিস: ১৭০)
(আরো বিভিন্ন আদব আছে আমরা নামাজের ভিবিন্ন বই থেকে শিখি আমল করার চেষ্ট করব,)
ইসলামিক
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
শরীয়তে নামাজের অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, ঈমানের পর যে বিষয় আদেশ করা হয়েছে তা হলো নামাজ, এবং কুরআনে সব চেয়ে বেশি নামাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে,আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرّٰكِعِیْنَ
অর্থ: এবং তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর। (সূরা বাকারা, আয়াত ৪৩)
وَاَقِیْمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ ؕ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللهِ ؕ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ
অর্থ: এবং নামাজ কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর এবং (স্মরণ রেখ), তোমরা যে কোনও সৎকর্ম নিজেদের কল্যাণার্থে সম্মুখে প্রেরণ করবে, আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয় তোমরা যে-কোনও কাজ কর আল্লাহ তা দেখছেন।
অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
وَجَاهِدُوْا فِی اللهِ حَقَّ جِهَادِهٖ هُوَ اجْتَبٰىكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَیْكُمْ فِی الدِّیْنِ مِنْ حَرَجٍ مِلَّةَ اَبِیْكُمْ اِبْرٰهِیْمَ هُوَ سَمّٰىكُمُ الْمُسْلِمِیْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِیْ هٰذَا لِیَكُوْنَ الرَّسُوْلُ شَهِیْدًا عَلَیْكُمْ وَتَكُوْنُوْا شُهَدَآءَ عَلَی النَّاسِ فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلٰىكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلٰی وَنِعْمَ النَّصِیْرُ
অর্থ: এবং তোমরা আল্লাহর পথে সাধনা কর, যেমন সাধনা করা উচিত, তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং দিনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনো সংকির্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দ্বীন (কে আকড়ে ধর)। তিনিই তোদের নাম রেখেছেন মুসলিম, পূর্বেও এবং এ কিতাবেও, যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা (অন্যান্য) মানুষের জন্য সাক্ষী হও। সুতারং তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর।তিনিই তোমাদের অভিভাবক। তিনি কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহয্যকারী। (সূরা হজ্ব, আয়াত: ৭৮)
اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیْلِ وَقُرْاٰنَ الْفَجْر اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا
অর্থ: তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর এবং ফজরের নামাজ (কায়েম কর) নিশ্চয় ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে। (সূরা বনী ইসরাইল,আয়াত: ৭৮)
یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَیَطْمَعَ الَّذِیْ فِیْ قَلْبِهٖ مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا وَقَرْنَ فِیْ بُیُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِیَّةِ الْاُوْلٰی وَاَقِمْنَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتِیْنَ الزَّكٰوةَ وَاَطِعْنَ اللّٰهَ وَرَسُوْلَهٗ اِنَّمَا یُرِیْدُ اللهُ لِیُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَیْتِ وَیُطَهِّرَكُمْ تَطْهِیْرًا
অর্থ: হে নবীর পত্নীগণ, তোমরা সাধারণ নারীদের মত নও যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, সুতারং তোমরা কোমল কন্ঠে কথা বল না, অন্যথায় যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে লালসায় পড়বে আর তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বল। প্রাচীন জাহিলিয়াতের মতো সৈান্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িও না এবং নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় কর। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, হে নবীর পরিবার, আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোদেরকে উত্তমভাবে পবিত্র করতে। (সূরা আহযাব, আয়াত: ৩২-৩৩)
ইসলামিক
কুরআন কারীম তেলাওয়াতের গুরত্ব ও ফযীলত
by sadiaakter sumi on Dec 05, 2024
কুরআন কারীম তেলাওয়াতের গুরত্ব ও ফযীলত
কুরআন নাযিল হল মাত্র এক মাসে আর সে মাস হল রমযানুল মুবারক। এ মাসে মুমিন মাত্রই কুরআনের সাথে এক অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে উঠে। দিনে সিয়াম (রোজা) রাত্রে কিয়াম (নামাজ) তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, যিকির, তিলাওয়াত, বিভিন্ন নেক আমলে পাবন্দি থাকে।বস্তুত রমযানকে ঘিরে কুরআন কারীমের সাথে একজন মুমিনের সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। কুরআনের নূরে নূরান্তিত হয়।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-اِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَةً یَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ، لِیُوَفِّیَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَ یَزِیْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِه اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ
অর্থ: যারা আল্লাহ তায়ালার কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে)ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যা কখনও লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্র প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন।নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত মহাগুণগ্রাহী। ( সূরা ফাতির (৩৫): ২৯-৩০)
কেউ কথা বা কাজ দ্বারা বুুঝাইতে পারে যে, কুরআন তিলাওয়াত শুধু রমযান মাসে জন্য না, এমনটি কখনই মনে করা জাবে না। কুরআন তিলাওয়াত পুরা বছর করতে হবে, এমন কি সারা জীবন করতে হবে।
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَ جِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَ اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَ
অর্থ: মুমিন তো তারাই (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরন করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তার তার আয়াত সমুহ তিলাওয়াত করা হয় তাদের ঈমান উন্নতি হয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সূরা আনফাল, আয়াত: ০২)
কুরআন তিলাওয়াতের আদব
কুরআন অন্য কোন বই এর মত না, কুরআন পড়তে হয় যথাযথ ভক্তি শ্রদ্ধা আদবের সহকারে। নিম্নে কয়েকটি আদব উল্লেখ করা হলো
১/ আউজুবিল্লাহ পড়া: তিলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়া, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِفَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
অর্থ: সুতরাং যখন আপনি কুরআন পাঠ করবেন, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন।। (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)
২/ বিসমিল্লাহ পড়া: তিলাওয়াতকারীর উচিত সুরা তাওবা ছাড়া সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। রাসূল কারীম (সাঃ) থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সুরা শেষ করে আরেক সুরা শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পড়ে শুরু করতেন।
৩/ সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন পড়া:
قَالَ الْبَرَاءَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ (وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ) فَمَا سَمِعْتُ أَحَدًا أَحْسَنَ صَوْتًا أَوْ قِرَاءَةً مِنْهُ
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল কারীম (সাঃ) কে এশার নামাজে সুরা ত্বিন পড়তে শুনেছি, আমি রাসূল কারীম (সাঃ) এর চেয়ে সুন্দর কন্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনি নাই। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৭৫৪৬)
৪/ রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুনি আসলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى وَفَضْلَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ "
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি গোসল করে তারপর জুমআর নামাজে আসে এবং তার জন্য যা ফরজ করা হয়েছে তা নামায পড়ে অতঃপর সে শোনে। তার উপদেশ শেষ করেন অতঃপর সে তার সাথে সালাত আদায় করবে এবং তার এবং পরবর্তী জুমার মধ্যে যা ঘটেছিল তার জন্য এবং বাকি তিন দিনের জন্য তাকে ক্ষমা করা হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৭২)
৫/ নিয়ত শুদ্ধ করা: রাসূল কারীম (সাঃ) বলেছেন যে, তিন শ্রেণির মানুষের উপর কেয়ামতের দিন জাহান্নাম দ্বারা আযাব দেওয়া হবে,তাদের মধ্যে এক জন ঐব্যক্তি যিনি ইখলাছের সাথে কোরআন তিলাওয়াত কররে না। (তিরমিজি, হাদিস; ২৩৮২)
৬/ সুর সহকারে তিলাওয়াত করা: এটি সুন্দর করে তিলাওয়াত করার অংশ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ وَزَادَ غَيْرُهُ يَجْهَرُ بِهِ
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূল কারীম (সাঃ) বলেছেন যে লোক সুন্দর আওয়াজে কুরআন পাঠ করে না, সে আমাদের মধ্যে নন।
৭/ কুরআন তিলাওআতের সময় ক্রন্দন করা: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡكُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا سُجود
অর্থ: আর তারা কাদতে কাদতে লুটিয়ে পড়ে এবংএটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সুরা বনিা ইসরাইল, আয়াত ১০৯)
৮/ ফজিলতপূর্ণ সুরা গুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তেলাওয়াত করা
قَالَ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِأَصْحَابِهِ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ قَ ثُلُثَ الْقُرْآنِ فِيْ لَيْلَةٍ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوْا أَيُّنَا يُطِيْقُ ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ الله الْوَاحِدُ الصَّمَدُ ثُلُثُ الْقُرْآنِ
অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল কারীম (সাঃ) তার সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াত করতে অক্ষম? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এটা পারবে? তখন রাসূল কারীম (সাঃ) বললেন ”কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থৎ সূরা এখলাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ। (সহীহ বুখারী, হাদিস; ৫০১৫৮)
৯/ কুরআনের মর্ম নিয়ে চিন্তা করা: এটিই কুরআন তিলাওয়াতের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ আদব। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ مُبٰرَكٌ لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِهٖ وَ لِیَتَذَكَّرَ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
অর্থ: আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভিরভাবে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানগন উপদেশ গ্রহন করে (সূরা সোয়াদ, আয়াত; ২৯)
১০/ তারতিলের সঙ্গে (ধীরস্থিরখভাবে) কুরআন পড়া: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ ٱلْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا
অর্থ: অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কুরআন পাট কর। (সূরা মুজ্জাম্মিল আয়াত: ৪)
১১/ ধৈর্য নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা: যিনি সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না, তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেন।
عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ ، وَمَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ القرآن وَهُوَ يَتَعَاهَدُهُ وَهُوَ عَلَيْهِ شَدِيدٌ فَلَهُ أَجْرَانِ
অর্থ: হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন, কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, সে সম্মনিত রাসূল ও পুণ্যাত্মা ব্যত্তিদের সঙ্গে থাকবে, আর যে ব্যক্তি আটকে আটকে পড়বে তার জন্য দ্বিগুন নেকি লেখা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৪৯৩৭)
১২/ যথাসম্ভব আদব সহ বসা: বসা, দাড়িয়ে, চলমান ও হেলান দেওয়া। সর্ববস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি আছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ
অর্থ: যারা দাড়িয়ে বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আসমান সমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে হে আমাদের রব আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেন নাই, আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১)
১৪/ তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আসলে সিজদা দেওয়া। সিজদর নিয়ম হলো তাকবির দিয়ে সিজদায় চলে যাওয়া।
১৫/ কুরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা:
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ إِنَّ أَفْوَاهَكُمْ طُرُقٌ لِلْقُرْآنِ فَطَيِّبُوهَا بِالسِّوَاكِ
অর্থ: আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মুখ হল কুরআনের রাস্তা, অতএব সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৯১)
কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়ম কানুন
কুরআন তিলাওয়াতের সময় যে সব বিষয় প্রতি খেয়াল রাখতে হবে
১/আরবী হরফের মাখরাজ২/ আরবী হরফের সিফাত বা বৈশিষ্ট ৩/নূন ও মীম সাকিন, তাশদীদযুক্ত নূন ও মীম ৪/ তানউন৫/ মদ্দের প্রকারভেদ ও বিধান৬/ ইদগাম বা সংযুক্ত৭/ রা এর বিধান
রাসূল (সাঃ) নিজে তিলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদের থেকে ও তিলাওয়াত শুনতেন
রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করতেন, হাদীস ও সীরাতের কিতাবে এই বিষয় বর্নণা পাওয়া যায়। রাসূল (সাঃ) নামাজে, নামাজের বাহিরে, রাতের আধাওে, দিনের আলোতে, সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন যে,রাসূল (সাঃ) নামাযে দাড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করতেন যে, তার পা মুবারক ফুলে যেত। (সহীহ মুসলিম,হাদীস ২৮১৯, ২৮২০)
রমযানুল মুবারক মাসে হযরত জিবরাইল (আঃ) কে রাসূল (সাঃ) পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং জিবরাইল (আঃ) থেকেও পূর্ণ কুরআন শুনতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬)
রাসূল কারীম (সাঃ) যেভাবে নিজে তিলাওয়াত করতেন তেমনি সাহাবীদের থেকে ও তিলাওয়াত শুনতেন। একবার রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) কে বললেন, তুমি আমাকে একটু তিলাওয়াত করি শুনাও। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে তিলাওয়াত শুনাব, আপনার উপর তো কুরআন নাযিল হয়েছে, রাসূল (সাঃ) বললেন, আমার মনে চাচ্ছে কারো থেকে একটু তিলাওয়াত শুনি, রাসূল (সাঃ) এর কথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) সূরা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াত পযন্ত আসলেন-
فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا
সুতারং সেই দিন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্তেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? (সূরা নিসা ,আয়াত:৪)
এতটুকু তিলাওয়াত করার পর নবীজী (সাঃ) ঠিক আছে। নবীম (সাঃ) থামতে বলার পর আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি, তার দুচোখ বেয়ে অশ্র ঝরছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৯,৫০৫৫,৪৫৮২,)
কুরআন তেলাওয়াত কারীদের জন্য কি কি লাভ হবে
কুরআন মাজীদ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কালাম, যারা আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করে, চিন্তা ভাবনা কওে, কুরআন থেকে হেদায়েত গ্রহন করে, কুরআন শিক্ষা দেয় এবং পারস্পরিক কুরআনের চর্চা করেঅ আল্লাহ তায়ালা তাদেও অত্যন্ত খুশি হন, তাদেও উপর বিষেশ রহমত নাযিল করেন, তাদেও অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দেন, তাদের মর্তবা বুলন্দ করতে থাকেন।হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرّحْمَةُ وَحَفّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ
অর্থ: আর যারা আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরিক কুরআনের চর্চা করে, তাদেও প্রতি সাকীনা তথা এক প্রকার প্রশান্তি বর্ষিত হয়, এবং রহমত তাদেরকে বেষ্টন করে নেয়, এবং আল্লাহ তার কাছের ফিরিশতাদেও মাঝে তাদেও আলোচনা করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯)
আল্লাহ আমাদেরকে সেই মুবারক মজরিসে শরীক করে নিন-আমীন।
কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ ও উপকারী। দুয়াতে এবং পরকালে এবং শারীরিক, মানসিক ও উপকার। সারা পৃথিবীর বুকে কুরআন কারীম এমন একটা কিতাব, যার প্রতি হরফে নেকি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) বলেন রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন-
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন কারীমের একটি হরফ পড়ল তার জন্য একটি নেকি রয়েছে, আর একটি নেকি দশ নেকির সমতুল্য, নবী কারীম (সাঃ) বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী,হদীস ২৯১০)
সুতারং আলিফ লাম মীম তিলাওয়াত করলে কমপক্ষে ত্রিশ নেকি হবে, ইনশাআল্লাহ। রাসূল কারীম (সাঃ) দৃষ্টান্ত স্বরূপ আলিফ লাম মীম উল্লেখ করছেন। আর এটি এমন এক শব্দ যার অর্থ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বুঝা গেল কুরআন কারীমের অর্থ না বুঝে পড়লেও অনেক সাওয়াব রয়েছে। আর যদি অর্থ বুঝে উপলব্ধির সাথে কুরআন তিলাওয়াত করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে আরো কত দিবেন তা আল্লাহ তায়ালায় ভালো জানেন। কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত হাদীসের বিবরণ থেকে সুন্দর করে বুঝা আসে-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلاَ قَطْعِ رَحِمٍ " . فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ . قَالَ " أَفَلاَ يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمَ أَوْ يَقْرَأَ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلاَثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ " .
অর্থ: উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমরা সুফফায় অবস্থান করছিলাম। রাসূলে কারীম (সাঃ) আমাদের সামনে আসলেন। বললেন, আচ্ছা বল তো, কেউ বুতহার অথবা আকিকে গিয়ে উচু কুজ বিশিষ্ট দুটি উটনী নিয়ে আসবে। কারো উপর জুলুম না করি, কোনো অপরাধ না করি, কোনো আত্তিয় সম্পর্ক ছিন্ন না করি, খুবই ন্যায়সঙ্গতভাবে। তোদের কে আছে এমনটি ছাইাবে? সাহাবীগন বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ এরকুম হলে তো আমদের সবাই ছাইবে, নবী করীম (সাঃ) বললেন, মসজিদে গিয়ে এলেম শিখা অথবা কুরআনের দুটি আয়াত পড়া, সেই দুটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৩)
তৎকালীন আরবে উচু কুজ বিশিষ্ট উটনী অইেক মূল্যবান সম্পদ ছিল, নবী কারীম (সাঃ) পার্থিব এ সম্পদরে তুলনা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন পরকালীন বিবেচনায় কুরআনের একেকটি আয়াত পড়া-শিখা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
উাত্তম ভাবে কুরআন কারীম তিলাওয়াত কারীদের সম্মান ,তাদের অনেক বড় ফযীলত রয়েছে, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقّ، لَهُ أَجْرَانِ
অর্থ: যারা উত্তমরূপে কুরআন তিলাওয়াত করবে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফিডিরশতাদের সাথে, আর যে কুরআন পড়তে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সওয়াব।
হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-
اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِه
অর্থ: তোমরা কুরআন পড়, কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার ছাহেবের জন্য সুপারিশ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৪)
ছাহিবে কুরআন কে? মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, ছাহিবে কুরআন ঐব্যক্তিকে বলা হয় যিনি কুরআন তিলাওয়াতে মুশগুল থাকেন, কুরআনের হেদায়েত ও বর্তা গুলি গ্রহন করেন, কুরআনের বিধান গুলি আমলে নেন, কুরআন হিফয করেন, মোট কথা কুরআনুল কারীম তার জীবনের আরাধনা। (ক‚তুল মগতাযী আর জামিইত তিরমিযী ২/৭৩২)
যে কুরআন তিলাওয়াত করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত
নেককার বদকার সবার জন্য আল্লাহর কালাম, যে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে আর যে নিয়মিত তিলাওয়াত করে না সবার জন্য কুরআন কারীম, তবে আমি চেষ্ট করবো তিলাওয়াত কারীদের অন্তর্ভুক্ত হােক, আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কুরআন তিলাওয়াত কারীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন ।
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالْأُتْرُجَّةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيْحُهَا طَيِّبٌ وَالَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالتَّمْرَةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلَا رِيْحَ لَهَا وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الرَّيْحَانَةِ رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ طَعْمُهَا مُرٌّ وَلَا رِيْحَ لَهَا.
অর্থ: হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে (এবং সে অনুযায়ী আমল করে) সে উতরুজ্জা ফলের মত, যার স্বাদ ও ভালো ঘ্রান ও সুন্দর। আর যে কুরআন পড়ে না সে খজুরের মত যার স্বাদ ভালো তবে কোন ঘ্রান নেই, আর যে বদকার ব্যক্তি কুরআন পড়ে সে রায়হানা সুগন্ধির মতো, যার ঘ্রান মোহনীয়, তবে স্বাদ ও তেক্ত। আর যে বদকার ব্যক্তি কুরআন পড়ে না সেহানযালা ফলের মতো, যার স্বদ তেতো, আবার কোন সুবাস নাই। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ২০৫০)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন-
تَعَلّمُوا القُرْآنَ فَاقْرَءُوهُ وَأَقْرِئُوهُ، فَإِنّ مَثَلَ القُرْآنِ لِمَنْ تَعَلَّمَهُ فَقَرَأَهُ وَقَامَ بِهِ كَمَثَلِ جِرَابٍ مَحْشُوٍّ مِسْكًا يَفُوحُ بِرِيحِهِ كُلّ مَكَانٍ وَمَثَلُ مَنْ تَعَلّمَهُ فَيَرْقُدُ وَهُوَ فِي جَوْفِهِ كَمَثَلِ جِرَابٍ أُ وكِئَ عَلَى مِسْك
অর্থ: তোমরা কুরআন শিখ, অতএব তা পড় এবং পড়াও, কেননা যে কুরআন শিখল এরপর তা পড়ল এবং রাত্রে (তাহাজ্জুদের) নামাযে তা তিলাওয়াত করল সে এমন পাত্রের মতো, যা মেশক আম্বর দিয়ে পূর্ণ, যা সর্বত্ত সুগন্ধি ছড়ায়, আর যে ব্যক্তি কুরআন শিখে শুয়ে থাকল এ ব্যক্তি এমন পাত্রের ন্যায় যা মেশকে ভরে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। (ফলে তার থেকে সুগন্ধি বাহির হয় না) (জামে তিরমিযী, হাদিস: ২৮৭৬)
কুরআন না শিখলে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত
আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-
وْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ
অর্থ: এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার চেয়ে আরো অধম ও নিকৃষ্ট এরাই হলো গাফেল। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯)
ইসলামিক
by sadiaakter sumi on Dec 03, 2024
শারীয়াহ আইন:
ইসলামে রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো শারীয়াহ আইন, যা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত আইন ও নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত হয়। শারীয়াহ আইন ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে রজনীতি জায়েয আছে, রাসূল (সাঃ) এর জীবনে রাজনীতি করছেন, ইসলামের দৃষ্টিতে রাজনীতি করতে হলে ইসলামী হকুমত অনুযায়ী কররতে হবে, বর্তমানে যে রাজনীতি চলতেছে, তা কিন্তু ইসলামের কোন আইন বাস্তবতা নাই। রাসূল (সাঃ) এর রাজনীতি আমাদের রাজনীতির সাথে কোন মিল নাই।
এখন আমরা ইসলামী রাজনীতি নামে যে রাজনীতি করি আর তখনকার আলেমরা যে ইসলামের রাজনীতি করেছেন দুটোর মাঝে আকাশ-পাতাল ফরক।
ঐ সময়ের আলেমদের রাজনীতির ধারা ও সুফল সম্পর্কে কিছু কথা।যেমন ধরুন, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী (রাহ.)। তিনি মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রাহ.)- কে নিয়ে ‘কারারদাদে মাকাসিদ’ তৈরি করেছেন। যা পাকিস্তানের সংবিধানের ভূমিকা; বরং পরবর্তীতে একে মূল সংবিধানের অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাঁদের স্থলাভিষিক্তরা পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেনি ও মতের লোকদেরকে এক করেছেন।
আজকে আমরা কখনো আমাদের বড় বড় ইসলামী মুভমেন্টগুলোতে করতে পারি না, তারা সেটা করেছেন। বেরলভী, সালাফীসহ যতগুলো গোষ্ঠী ছিল সবাইকে নিয়ে একত্রে বসেছেন এবং ‘বাইস নেকাতী প্রোগ্রাম’ বিন্যস্ত করেছেন। ইসলাম বিদ্বেষীরা বলেছিল-
کونسا اسلام قائم کروگے কোন ইসলাম কায়েম করবেন?
ওনারা বলেছেন-
یہ اسلام قائم کرینگے.এই যে, ইসলাম কায়েম করব।
এতে কোনো ইখতেলাফ নেই। এখানে সকল গোষ্ঠী, সকল ফিরকা, সকল দল-উপদল একমততাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, তাঁদের রাজনীতি আর আমাদের রাজনীতির মাঝে ফরকটা কত? তারা কত বড় অবদান রাখতে পেরেছেন। সেটার ফল এখনো ভোগ করছে পাকিস্তানের লোকেরা। ‘করারদাদে মাকাসিদ’ শিরোনামে পাকিস্তানের সংবিধানের প্রস্তাবনাতে সে নেকাতগুলো এখনো লেখা আছে। সেকুলার লোকেরা সেটা এখনো বাতিল করতে পারেনি।
এরপরে আসুন, যখন একসময় কাদিয়ানীদের প্রশ্ন এল, তারা যখন মানুষের ঈমান ধ্বংস করা শুরু করল, তখন যারা রাজনীতি করতেন তারাই ভূমিকা রেখেছেন। মুফতী মাহমুদ ছাহেবের নেতৃত্বে তখন বড় কাজ হয়েছে। তিনি সংসদে ছিলেন। বাইরে ছিলেন হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ বিন্নুরী (রাহ.)- সহ অন্যান্য উলামা-মাশাইখ। ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টি ছাড়া পুরো পাকিস্তানের সকল দলকে তারা এক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। যে দলগুলোর মধ্যে ন্যাপের মত দলের লোকেরাও ছিল, বামপন্থীরাও ছিল। তাদেরকে এক মঞ্চে এনেছেন। সবাইকে পার্লামেন্টে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে উৎসাহিত করেছেন। সবাই একসাথে বলেছে যে, হাঁ, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষিত করা হোক। কিন্তু আজকে আমাদের দেশে দেখবেন যে, ঐ সমস্ত বাম দলগুলোর থেকেই যারা শাখা হয়ে এসেছে, তারা কাদিয়ানীদের ধর্মীয় সভাগুলোতে গিয়ে গিয়ে লেকচার দেয়। এটা সেটা বলে। তারা তাদের পূর্বসূরিদের ইতিহাস দেখে না। তাদের পূর্বসূরিরা কাদিয়ানী বিরোধী মঞ্চে যোগ দিয়েছিল।
তাহলে এক মুফতী মাহমুদ ছাহেব, তার দলে সংসদসদস্য সংখ্যা তখনো অনেক বেশি ছিল না, অথচ তিনি এক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য যদি ইসলামী রাজনীতি করতেই হয়, তাহলে তো আপনার কোনো একটা অবস্থান থাকতে হবে। একটা আদর্শ-উদ্দেশ্য থাকতে হবে। একটা ভূমিকা থাকতে হবে।
রাজনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে একটা প্রয়োজন বা আদর্শ থাকতে হবেইসলামের রাজনীতি কি আদর্শ ছাড়া হয়? ইসলামী রাজনীতি বলতে খুব সহজ-সরলভাবেই মানুষ যেটা বোঝে তা হচ্ছে, তাঁরা দেশে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সরকার কায়েম করতে চান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সরকার কায়েমের কোন্ রাস্তাটা উদ্ধার হচ্ছে এভাবে জোটের মধ্যে গিয়ে? আর এভাবে নমিনেশন চাওয়াতে মান-ইজ্জত কিছু কি থাকছে? বলা হচ্ছে যে, আমরা পঞ্চাশ আসনে তৈরি আছি, চল্লিশ আসনে তৈরি আছি। এরপর দুটো-তিনটা আসন পাচ্ছে। এভাবে উদ্দেশ্যহীন চলার আখের ফায়দাটা কী?
ইসলামিক
by Ibrahim Sikder on Sep 09, 2024
শিশুদের মনের অবস্থা নরম কাদামাটির মতো, যা সহজেই গঠন করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে যা শেখানো হয়, তা তাদের জীবনের অবশিষ্টাংশে প্রভাব ফেলে।আমরা যদি শিশুদের মনের বাগানে ঈমানের ফুল ফুটাতে চাই, যদি আমরা চাই তারা বড় হয়ে আল্লাহর বিশ্বস্ত বান্দা হয়ে উঠুক, তাহলে জীবনের প্রথম থেকেই এটি শুরু করতে হবে। আমরা যদি তাদের জীবনের প্রথম দিকে সঠিক দ্বীন শিক্ষা দিতে না পারি, তাহলে তাদের সারাজীবন ধর্ম মেনে চলা বা গ্রহণ করার আশা করা অযৌক্তিক।
কিন্তু আমরা কেন আমাদের সন্তানদের দ্বীন শিক্ষা দিতে অবহেলা করি তার প্রধান কারণ আমরা দ্বীন অর্থ জানি না। আমরা বিশ্বাস করি যে কুরআন তিলাওয়াত করা, নামায পড়া আর কিছু দোয়া শেখা মানেই দ্বীন শিক্ষা। আমরা প্রায়ই দ্বীনকে ধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলি। দ্বীন মানে কি আর ধর্ম মানে কি তা আমাদের বুঝতে হবে। দ্বীন একটি খুব বিস্তৃত শব্দ যা ধর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা আমাদের সন্তানদের ধর্ম শেখাই, দ্বীন নয়। । তাদের শিখাতে হবে কিভাবে দ্বীনের পথে চলতে হবে। তারা আল্লাহকে চিনবে, তারা আল্লাহর রাসূলকে চিনবে,সাহাবীদের জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবে। তারা তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী কাজ করবে।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়ক। কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার মাধ্যমে তারা সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে শিখে। ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভ (কুরআনের শিক্ষা, সালাত, রোজা, যাকাত, এবং হজ) শেখানোর মাধ্যমে তাদের নৈতিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। এভাবে, তারা ধর্মীয় আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
দ্বীন শিক্ষা ছোটদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ায়। মসজিদে, মাদ্রাসায় বা স্কুলে অন্যান্য শিশুদের সাথে মিলে তারা সামাজিকীকরণ শিখে। এতে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, এবং সহমর্মিতা তৈরি হয়। তারা নিজেদের পরিচয় ও সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত থাকে, যা তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
ছোটবেলায় যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। একটি শিশু যে নৈতিক মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা ছোটবেলায় গ্রহণ করে, তা তার পুরো জীবনে প্রভাবিত করে। দ্বীন শিক্ষা তাদের নৈতিক ভিত্তি মজবুত করে, যা তাদের ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করতে সহায়ক হয়।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা প্রদান করতে কিছু কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে:
ছোটদের জন্য দ্বীন শিক্ষা আনন্দদায়ক এবং ইন্টারেক্টিভ করা উচিত। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা, গল্প বলা, এবং সৃজনশীল কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় শিক্ষা সহজেই গ্রহণ করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনের সাথে দ্বীন শিক্ষাকে সংযুক্ত করা উচিত। যেমন, খাবার খাওয়ার আগে দোয়া শেখানো, ঘুমানোর আগে দোয়া পাঠ করা, কার সাথে কেমন আচরন করা উচিৎ ইত্যাদি।
পরিবার থেকেই শিশুরা তাদের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। পরিবারের বড়দের যেভাবে চলাফেরা করতে দেখবে তারা তাই শিখবে। বড়দের রোল মডেল হিসেবে কাজ করা উচিত। শিশুরা বড়দের আচরণ অনুকরণ করে, তাই বাবা-মা র উচিত দ্বীন অনুযায়ী জীবনযাপন করা।তবেই শিশুরা দ্বীন শিক্ষা সহজেই নিজের অন্তরে গেথে নিবে।
বর্তমান যুগে পরিবারের পাশাপাশি আরও অনেক মাধ্যম রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে সহজেই আমাদের সন্তানদের দ্বীন সম্পর্কে জানাতে ও বুঝাতে পারি। বই তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারি মাধ্যম। এছারা অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ, এবং অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করে শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা তাদের জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে। এটি তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়ক এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে দ্বীন শিক্ষা প্রদান করে, আমরা একটি সুশৃঙ্খল, নৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে সজাগ প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি।
ইসলামিক
ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বইয়ের ভূমিকা
by Ibrahim Sikder on Sep 09, 2024
ইসলাম সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? আর যা জানিনা তা কার কাছে বা কোথায় জানতে পারি? এর একটি উত্তর হতে পারে বই। বই হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানের ভান্ডার। আল্লাহর বাণী, রাসূলের হাদিস, সাহাবীদের জীবনযাত্রা সহ সৃস্টির শুরু থেকে সকল কিছু আমরা পেয়ে যাব কুরান ও বিভিন্ন বইয়ে।তাই বই হলো শ্রেষ্ঠ মাধ্যম যা থেকে আমরা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে, যা মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই ঐতিহ্য মুসলিম বিশ্বে একটি সমৃদ্ধ সাহিত্য ও শিক্ষামূলক ঐতিহ্য গঠন করেছে, যা বিভিন্ন সময়ে সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে।
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই বইয়ের গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। কুরানের প্রথম বাণী ছিল "পড়" (ইকরা), যা সাক্ষরতা ও জ্ঞানার্জনের প্রতি ইসলামের অঙ্গীকার প্রকাশ করে। কুরআন, যা ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ, শুধু ধর্মীয় দিকনির্দেশনাই নয়, বরং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
অষ্টম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলিম বিশ্ব জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বাগদাদের বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য গ্রন্থাগার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ছিল এই সময়ের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই সময়ে গ্রিক, পারস্য, ভারতীয় এবং অন্যান্য সংস্কৃতির গ্রন্থ আরবিতে অনূদিত হয় এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন গবেষণা ও আবিষ্কার করা হয়।
ইসলামী শিক্ষায় বই সবসময়ই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় কুরআন ও হাদিসের উপর গভীরভাবে জোর দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রথমে কুরআন মুখস্থ করে, যা হিফজ নামে পরিচিত, এরপর তারা তাফসির (কুরআনের ব্যাখ্যা), হাদিস সংগ্রহ, ফিকহ (ইসলামী আইন) এবং অন্যান্য ইসলামী বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে।
সাহিহ আল-বুখারি ও সাহিহ মুসলিমের মতো হাদিসের সংগ্রহ, ইমাম মালিকের আল-মুয়াত্তা, এবং কাজি ইয়াদের আল-শিফা প্রভৃতি বই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলামী পণ্ডিতদের জন্য অপরিহার্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই বইগুলি জীবনের বিভিন্ন দিক, আইন ও আধ্যাত্মিকতার উপর বিস্তৃত নির্দেশনা প্রদান করে, যা ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি গঠন করে।
ধর্মীয় গ্রন্থের পাশাপাশি, ইসলামী পণ্ডিতরা অন্যান্য জ্ঞানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে সিনার "ক্যানন অফ মেডিসিন" এবং আল-খাওয়ারিজমির গণিতে কাজগুলি বৈশ্বিক জ্ঞানভাণ্ডারে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এই বইগুলি শুধু ইসলামী বিশ্বেই নয়, মধ্যযুগীয় ইউরোপেও পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
আজকের দিনে, মুসলিম বিশ্বে শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা ও বইয়ের গুরুত্ব অব্যাহত রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষার নতুন নতুন পদ্ধতি নিয়ে এলেও, বই এখনও অপরিহার্য সম্পদ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলি এখনও তাদের পাঠ্যক্রমে শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলির উপর নির্ভর করে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল গ্রন্থাগারগুলি এই গ্রন্থগুলিকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে শতাব্দীপ্রাচীন ইসলামী জ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
বর্তমান যুগে মুসলিম লেখকরাও বিভিন্ন আধুনিক সমস্যাকে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান করার লক্ষ্যে নতুন নতুন গ্রন্থ রচনা করছেন। ইসলামী অর্থনীতি, নৈতিক নেতৃত্ব এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপের উপর লেখা বইগুলি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যা ইসলামী চিন্তার গতিশীলতা এবং এর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা প্রতিফলিত করে।
ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বইয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী। কুরআন থেকে শুরু করে সমসাময়িক সাহিত্য পর্যন্ত, বই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আধ্যাত্মিক জীবন গড়ে তুলেছে। ইসলামী পণ্ডিতদের ঐতিহাসিক কৃতিত্ব, শিক্ষার মূল পাঠ্যপুস্তক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহত অবদান বইয়ের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকালে, এটি স্পষ্ট যে বই ইসলামী জ্ঞানের প্রচার ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকবে। ধর্মীয় ও সমসাময়িক উভয় গ্রন্থের সাথে সম্পর্ক রেখে, বিশ্বের মুসলিমরা তাদের বিশ্বাসের উপলব্ধি ও চর্চা আরও গভীর করতে পারে, নিশ্চিত করতে পারে যে ইসলামী শিক্ষার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য জীবন্ত ও প্রাসঙ্গিক থাকে।
ইসলামিক
নারীর উত্তরাধিকার ও ইসলাম কি বলে
by Ibrahim Sikder on Sep 09, 2024
ইসলাম আগমনের পূর্বে নারীদের অবস্থান ছিল পুরুষের অনেক নিচে। নারীদের শুধু ভোগ ও বিলাসিতার সামগ্রী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তাদের না ছিল নিজস্ব কোন পরিচয় না ছিল কোন অধিকার। পণ্যের মতো তাদের বেচা-কেনা হতো। আবার অনেকে কন্যা সন্তান হলে জীবিত পুঁতে ফেলত। ইসলাম প্রথম কন্যা সন্তানকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা প্রদান করেছে। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন-পালন করেছে, পুত্র সন্তানকে কন্যাদের ওপর প্রাধান্য দেয়নি, তাদেরকে উত্তম ও আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তাদেরকে বিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে, সে জান্নাত লাভ করবে।(আবু দাউদ: ৫১৪৯)
মানব সমাজে পুরুষের যতটুকু অবদান রয়েছে নারীরও ঠিক ততটুকু ভূমিকা রয়েছে। এর একটি ছাড়া আমাদের মানব সমাজ অচল। বর্তমান সমাজে নারীদের যতটুকু সম্মান ও মর্যাদা দেয়া হয় অতীতে এই চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। জাতি ও ধর্ম ভেদে নারীদের অবস্থান ভিন্ন হলেও তাদের ছিল না কোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা। আরবে যেমন কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া হত, সভ্যতার দাবিদার ইংল্যান্ডে ডাইনি বলে নারীকে পুড়িয়ে মারার আইন ছিল যা রদ করা হয় ১৭৩৬ সালে।ইংল্যান্ড ও ব্রিটেনে ১৯শ শতকের শেষ দিকে ও ২০শ শতকের শুরুর দিকে নারীরা সম্পত্তি অধিকার অর্জন করে। বিভিন্ন রাজ্যে "ম্যারিড উইমেন'স প্রপার্টি অ্যাক্ট" প্রণয়ন করা হয় যা বিবাহিত নারীদের নিজস্ব সম্পত্তি রাখার অধিকার প্রদান করে। জার্মানী নারীদের ১৯০০ সাল, সুইস নারীদের ১৯০৭, অষ্ট্রেলীয় নারীদের ১৯১৯ সালের আগে ছিল না কোনো উত্তরাধিকার সম্পত্তি। ভারতের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীরা সম্পত্তি অধিকার লাভ করে। এর আগে নারীদের সম্পত্তিতে অধিকারতো ছিলই না বরং সতীদাহ এর মতো প্রথা প্রচলিত ছিল।
অথচ ইসলাম সৃষ্টির পর থেকেই বলে আসছে নারীদের অধিকারের কথা, তাদের উত্তরাধিকারের কথা, পর্দা ও শালীনতা বজায় রেখে নিজে উপার্জন করার কথা। আমাদের প্রিয় নবী,বিশ্ব মানবতার বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ‘সভ্য পৃথিবীর’ও ১৩০০ বছর আগে বলে গিয়েছেন নারীর অধিকারের কথা। শুধু বলেই যাননি তিনি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন একজন পূর্ণ বয়ষ্ক নারী নিজেই সম্পত্তির মালিক হতে পারেন এবং চাইলে কারও অনুমতি ছাড়াই সম্পত্তি হস্তান্তরও করতে পারবেন। তিনি আরও বলে গেছেন পবিত্র কোরআনে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পর্কেে যে নির্দেশ এসেছে তা যেন যথাযথ ভাবে পালন করা হয়।
একজন নারীর উত্তরাধিকার ও সম্পত্তিতে তার অধিকার কেমন হবে তার স্পষ্ট বর্ণনা আল্লাহ কোরআন মাজিদে দিয়েছেন। কুরআনের বিভিন্ন সূরায় নারীর উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে সূরা নিসা (সূরা ৪) এই বিষয়ে অনেক নির্দেশনা প্রদান করে।
সুরা আন-নিসা (৪:৭) এ বলা হয়েছে: "পুরুষদের জন্য রয়েছে তাদের পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে অধিকার এবং নারীদের জন্যও রয়েছে তাদের পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে অধিকার, যা সামান্যই হোক বা বেশি; এ হল নির্ধারিত অংশ।"
একজন নারী তার পিতা-মাতার সম্পত্তিতে কি পরিমান অংশ পাবেন তারও স্পষ্ট ধারণা কোরআনে দেয়া আছে। ‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন: একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর সমান। আর যদি শুধু নারীই হয় দু-এর অধিক, তাহলে তাদের জন্যে ওই ত্যাজ্য মালের তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি (কন্যা) একজনই হয় তাহলে সে জন্য অর্ধেক।’ (সুরা নিসা: ১১)। অর্থাৎ কোন নারীর যদি ভাই থাকে তাহলে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন কন্যা বাকি দুই ভাগ পাবেন পুরুষ। যদি কন্যা একাধিক হয় তাহলে পুরুষ পাবে অর্ধেক বাকি অর্ধেক কন্যাদের মধ্যে ভাগ হবে। আর যদি কোন ভাই না থাকে কন্যা একা হয় তাহলে কন্যা পাবে পিতা-মাতার রেখে যাওয়া অর্ধেক সম্পত্তি এবং কন্যা একাধিক হলে দুই তৃতীয়াংশ পাবে।
নারী যে শুধু পিতা মাতার সম্পত্তি পাবে তানা, স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর অংশ। পবিত্র কোরআনুল কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘স্ত্রীদের জন্য তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে তাহলে তাদের জন্য হবে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ।’। (সুরা নিসা: ১২)।
মা জীবিত থাকতে যদি সন্তান মারা যায় তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মায়ের অংশ থাকে। মা সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পান যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে। সন্তান না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির ভাই-বোনও না থাকলে, মা এক-তৃতীয়াংশ পান।
পৃথিবীতে যুগে যুগে গড়ে উঠেছে বহু সভ্যতা, সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধর্মের যা পরবর্তিতে বিলীনও হয়ে গিয়েছে। নারীরা কোথাও সম্মান পেয়েছে কোথাও পায়নি। কিন্তু নারীকে উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে শান্তির ধর্ম ইসলাম। যেখানে খ্রীষ্ট ধর্মে পুত্র থাকলে কন্যা কোন সম্পত্তি পেত না । স্বামী মারা গেলে তাদের যদি সন্তান না থাকে ঐ মৃত লোকের সম্পত্তি পায় তার নিকটাত্মীয়রা তবুও মৃত ব্যাক্তির বিধবা স্ত্রী কোন সম্পত্তি পেত না। অথচ ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ন্যায়বিচার ও সুষম বন্টনের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে নারীদের যে অবস্থান ছিল তা থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে। ইসলামের আইন ও নীতিমালা নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যেখানে তারা তাদের অধিকার এবং মর্যাদা লাভ করতে পারে। ইসলামের এই পরিবর্তন নারীদের সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ভূমিকা প্রদান করেছে।
ইসলামিক
আমি একজন ভালো মানুষ হতে চাই: ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পরামর্শ
by Ibrahim Sikder on Sep 09, 2024
আমরা সবাই জানি মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়।কিন্তু আমরা সবাই কি সেরা জীব হতে পেরেছি? প্রথমত আমরা কি একজন ভালো মানুষ হতে পেরেছি? প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকে, আর তা হলো একজন ভালো মানুষ হওয়া। ইসলামে ভালো মানুষ হওয়ার অর্থ শুধু পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন নয়, বরং ইসলামিক শিক্ষার আলোকে নিজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধন করা। ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যা আমাদের জীবনযাপন, আচরণ, ও মনোভাব সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব।
১. ইমান (বিশ্বাস) এবং তাকওয়া (আল্লাহর ভয় ):
ইসলামের মূল ভিত্তি হলো ইমান, যা একজন মুমিনের জীবনে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা তৈরি করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা সত্যিকার মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর।" ইমানের পাশাপাশি তাকওয়া, অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ভয় এবং তাঁর নির্দেশনা মেনে চলা, একজন মুসলিমকে সত্যিকার অর্থে একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে।
২. আখলাক (চরিত্র):
ইসলামে আখলাক বা চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, "আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধন করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।" ভালো মানুষ হওয়ার জন্য আখলাকের উন্নতি করা অত্যন্ত জরুরি। উত্তম আখলাকের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করতে পারে এবং সমাজে সম্মান অর্জন করতে পারে। এতে ধৈর্য, ক্ষমাশীলতা, নম্রতা, সত্যবাদিতা, এবং সহনশীলতার মতো গুণাবলী অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৩. ইবাদত ও দোয়া:
ইবাদত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো পালন করা। নামাজ, রোজা, হজ, এবং যাকাত ইসলামের মূল স্তম্ভ। ইবাদতের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। ইবাদত একজনের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাকে একটি সৎ ও নৈতিক জীবনযাপনের পথে পরিচালিত করে। পাশাপাশি, নিয়মিত দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা একজন মুসলিমের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৪. নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত এবং হাদিস অধ্যয়ন:
কুরআন হলো আল্লাহর পবিত্র বাণী, যা মানুষের জীবনের জন্য পথ নির্দেশনা। কুরআন তিলাওয়াত করার মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর নির্দেশনা ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। পাশাপাশি, প্রিয় নবী (সা.)-এর হাদিসগুলো অধ্যয়ন করে আমরা জানতে পারি কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়। রাসুল (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ, এবং তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি কিভাবে একজন ভালো মুসলিম ও ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব।
৫. আত্ম-সমালোচনা এবং আত্ম-উন্নয়ন:
ইসলাম আমাদেরকে আত্ম-সমালোচনা করতে এবং নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে তা সংশোধন করার নির্দেশনা দেয়। নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করা এবং নিজের খারাপ দিকগুলোকে সংশোধন করা একজন ভালো মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।" (সুরা রাদ: ১১)
৬. মানবিক গুণাবলী চর্চা:
ইসলাম মানবিক গুণাবলীকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। দরিদ্র, এতিম, এবং অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা, দয়া, সহানুভূতি, এবং ন্যায়পরায়ণতা চর্চা করা একজন ভালো মানুষের পরিচায়ক। প্রিয় নবী (সা.) বলতেন, "তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম যে তার নিকটবর্তীজনের প্রতি ভালো আচরণ করে।"
৭. সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ:
ইসলাম একটি সামষ্টিক ধর্ম, যা সমাজের প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্ববোধশীল হতে উৎসাহিত করে। একজন ভালো মুসলিম শুধুমাত্র নিজের উন্নতির জন্যই কাজ করে না, বরং সে তার সমাজের জন্যও ভালো কাজ করে। সমাজের শান্তি, স্থিতি, এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
৮. ক্ষমাশীলতা এবং ধৈর্য:
ক্ষমাশীলতা এবং ধৈর্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমরা ক্ষমা কর, আল্লাহরও তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।" ক্ষমাশীলতা একজনকে একজন উত্তম মানুষে পরিণত করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
৯. সৎ ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপন:
ইসলামে সৎ জীবনযাপন এবং ন্যায়পরায়ণতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, এবং সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো একজন মুসলিমের দায়িত্ব।
ভালো মানুষ হওয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ইসলাম আমাদেরকে সেই পথ প্রদর্শন করে, যার মাধ্যমে আমরা নৈতিক, আধ্যাত্মিক, এবং সামাজিকভাবে উন্নত হতে পারি। একজন ভালো মানুষ হতে হলে ইসলামিক শিক্ষার আলোকে জীবনযাপন করতে হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একজন ভালো মানুষ এবং একজন ভালো মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠার তৌফিক দান করুন। আমিন।
ইসলামিক
by Ibrahim Sikder on Jul 27, 2024
তাওবা ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা মানুষের আত্মশুদ্ধি ও সতর্ক নৈকট্য লাভের উপায়। তাওবা শব্দের অর্থ হল ফিরে আসা বা প্রবর্তন করা। তাওবা করায় আমার কাছে ফেরত আসা, তার কাছে আমার পাবার জন্য অনুরোধ করা এবং ভুল সঠিক পথে প্রতিজ্ঞা করা। সব মানুষই কিছু ভুল করে না। কেউ বড় করে ভুল করে। কেউ শেয়ার করে কেউ নাজাতই করে। এই মানুষটিরই আমাদের আদি পিতা আদম (আ।) এর ভুল কারণ। কিন্তু ভুল করার পরে যদি আমরা আমাদের ভুল আলোচনা করতে পারি তাহলে শয়তান এবং মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। যেমন আদম (আ.) তার ভুল সিদ্ধান্তের নির্দেশনা আমার কাছে একনিষ্ঠ মনে করা তাওবা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে আমাদেরও উচিত ছোট বড় সব ধরনের ভুলের জন্য আমার কাছে কার্যকর তাওবাকে মনে করা। রাসুল পাল্টা উত্তোলন 'ওয়াওয়া সাল্লাম' লেখক, মানুষ মাত্রই গুণাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাতাররাই উত্তম।' (ইবনু মাজাহ ৪২৫১) তাওবাকারীকে বেশি ভালোবাসেন।কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 'নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।' (সুরা বাকারা : ২২২) এই আয়াত থেকে আমরা আলোচনা করতে পারি যে আমরা আরও বেশি তাওবা তারা আল্লার কাছে বেশি প্রিয়। গুরুত্ব ওভাবে তাওবার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। নেতাঃ তাওবার গুরুত্ব ও তার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে লেখকঃ "তোমাদের রব বলেছে, 'হে আমার বান্দারা, যারা প্রতি অন্যায় করেছে, তোমাদের রহমত থেকে নিরাশ হয় না। নিঃসন্দেহে আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ। আপনি একজন হন: "নিয়ই আমার তাওবাতার তাওবায়ে এত বেশি আনন্দিত, যেমন এক ব্যক্তি যার আউট পেয়েছিলেন এবং তার পিছনে খুব আনন্দ হয়েছিল।" (মুসলিম) আমরা ভুল করার পরে ভুগি ভাবি আমাদের সতর্ক করবেন না। কিন্তু আল্লাহ পরম দয়ালু তিনি আমদের তার কাছে তাওবা করতে লেখক। আপনার তাওবাকে ভালোবাসার কারণ তারা তাদের ভুলগুলোকে ভুল করে এবং পথ ফেরত চেষ্টা করে। এটি দয়া করে সতর্ক ও ক্ষমা করুন। মনেঃ তাওবার সব সময় খোলার সময়, যাতে মানুষ তার কাছে ফিরে আসতে পারে। আল্লাহ হুজুর, "আর যারা অজ্ঞাতাবশত মন্দ কাজ করে তারপর তৎক্ষণৎ তাওবা এবং সংশোধন করে, নিশ্চয়ই তোমার রব তাদের জন্য পরম অবশ্যই অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আন-নাহল : ১১৯) আল্লাহ এবং রাসুল আমাদের শুধু তাওবা করতে বলেন, কিভাবে তাও শিখতে হবে। اَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ الَّذِيْ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ اِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফির পুলিশল্লাজী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি প্রার্থনা করি, আর কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। আমি তার দিকে ফিরে আসছি (তাওবা করি)। اَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফির পুলিশওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি ওয়াকিফহালকে অনুরোধ করি এবং তাঁর দিকে ফিরে আস (তাওবা করি)। رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ উচ্চারণ: 'রাব্বিগ্ফিরিলিওয়া তুব আলাইয়া ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।' অর্থ: 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। আপনি মহান তাওবা কবুলকারী নিশ্চয়ই করুণাময়।' সাইয়িদুল ইস্তেগফার اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا اِلٰهَ اِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْتَعُتَعُتْ اسْتْكُ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَإِنَّهُ لَا يَوْتِ الْاِنَّهُ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানী ওয়ানা আবদুকা আনা আ'লা আহদিকা ওয়া'য়াদিকা মা'স্তা'তু আ'উজু বিকা মিন শারি মা ছানাতু আবু'উ লাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়া ওয়া আবু'উ বিনাবী ফাঘফিরলী ফিন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনু'বা ইল্লা আন্তা। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনার ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আপনার দাস এবং আমি আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যতটুকু পারি। আমি আমার কর্মের মন্দ থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার কাছে যা করছি, আপনি আমার প্রতি সমস্ত অনুগ্রহ করেছেন, আমি তার শুকরিয়া করছি এবং আমার গুনাহও করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ গুণাহ মাফ করতে পারেন না। তাওবা ও ইস্তেগফারের নিয়ম ১. খাঁটি নিয়ত করা: তাওবা করতে চাইলে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও সত্যিকারের পাপের জন্য অনুতপ্তি জরুরি। অন্তর থেকে মানতে আমি ভুল করেছি এবং একনিষ্ঠভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ২. পাপ বর্জন: তাওবা বা ইস্তেগফার যদি আবার ঐ একই ভুল করি তাহলে তাওবার কোন মূল্য মূল্য না। তাওবা করার পর পাপ করার কাজ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে রাখা এবং এই পাপ আর দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। ৩. পূর্ব পাপের ক্ষতিপূরণ: যদি ভুল এমন হয় যার কারণে অন্য নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে সেই ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে সাথে তার কাছে ও কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ৪. পড়া পড়া: তাওবা বা ইস্তেগফার একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যার মাধ্যমে আমরা ইহকাল ও পরকাল দুইটি পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। তাই আমাদের প্রতিদিন ইস্তেগফার করা এবং তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। তাই মুমিনের উচিত, গুনাহ করার জিনিষ কথা না বলা আরদের না করে ফরজ কাছে তওবা করা। তাদের কাছ থেকে গুনাহ থেকে ফিরে আসা। হাদিসের উপর চাপ প্রয়োগ করা। গুনাহ মুক্ত জীবন গড়া। তবেই তাওবাকারী হবে। যেভাবে আল্লাহ বলেছেন- وَتُوْبُوْا إِلَى اللهِ جَمِيْعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ 'হে মুমিনগণ! তোমরা যাতে সফলকাম হতে পারো।' (সুরা নুরা : ৩১) আল্লাহ তাআলা আমাদের ই বেশি বেশি তাওবা বাস্তেগফার করার তাওফিক দানের জন্য আমরা আমাদের প্রিয় বান্দা হতে পারি।