নামাজের আদব সমূহ

নামাজের আদব সমূহ

১.ইখলাস বা একনিষ্টতা: 

ইখলাস সব আমলের জন্য প্রয়োজন ইখলাস বিহিন কোন আমল কবুল হয় না, তেমনি নামাজের জন্য ইখলাস আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

وَمَا أُمِرُوْا إِلَّا لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ وَيُقِيْمُوْا لصَّلَاةَ وَيُؤْتُوْا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ

অর্থ: এবং তাদেরকে এছাঢ়া কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা একনিষ্টভাবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এবং নামাজ কায়েম করবে, এবং যাকাত আদায় করবে, আর এটাই হল সরল দ্বিন। (সূরা বাইয়েনা, আয়াত: ৫)

২/ বিনয়ের সাথে নামাজ আদায় করা:

যারা সময় মত নামাজ আদাই করে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সফলকাম মুমিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ

অর্থ: নিশ্চয় সফল কাম হয়েছে মুমিনগন যারা তাদের নামাযে বিনীত । (সূরা মুসিন, আয়াত: ১-২)

৩/ একাগ্রতার সহকারে নামাজ আদায় করা:

নামাজে একাগ্রতা খুব জরুরী, অর্থাৎ মনোযোগ সহকারে নামাজ পড়া,নামাজে যদি মনোযোগ না থাকে তাহলে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَّمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ

অর্থ: আল্লাহ তায়ালার এবাদত কর এমন ভাবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ, আর যদি দেখতে না।

৪/ রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত অনুসরণ করা: 

রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى

অর্থ: তোমরা নামাজ আদায় কর ঐভাবে, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখেছ          (সহীহ বুখারী, হাদিস:৬৩১)

৫/ উত্তম রুপে অজু করা: 

অজু হচ্ছে নামাজের চাবি, আর নামাজ সম্পূর্ণ হওয়ার শর্ত হলো অজু উত্তমরুপে করা।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ. قَالُوْا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَى الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ

অর্থ: আমি কি তোমাদেরকে বলব না, আল্লাহ তায়ালা কি দিয়ে গুনা মুছেদেন, এবং মর্যদা বাড়িয়ে দেন? সাহাবায়েকেরাম বললেন হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ ) হ্যা বলেন , রাসূল (সাঃ) বললেন কষ্ট হওয়া সত্তে¡ও উত্তমরুপে অজু করা, মসজিােদও দিগে বেশী বেশী যাতায়েত করা, এবং এক নামাজ শেষ করি পরবর্তী নামাজের জন্য অপেক্ষা করা, আর এটাই রিবাত। (সহীহ মুসলিম,হাদিস:২৫১)

৬/ নিয়মিত নামাজ আদায় করা:

নামাজ নিয়মিত আদায় করতে হবে, শুদু দুই ঈদে বা শুক্রবারে নামাজ আদায় করার বিদান ইসলামে নাই। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

الَّذِيْنَ عَلَى صَلَاتِهِمْ دَائِمُوْنَ

অর্থ: যারা তাদের নামাজ নিয়মিত আদায় করে। (সূরা মা’আরিজ:২৩)

৭/ দাড়িয়ে নামাজ আদায় করা:

যে ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক আছে সে অবশ্যয় দাড়িয়ে নামাজ আদায় করবে, আর যদি অসুস্থ হয় দাড়াই অক্ষম তাহলে সে বসে নামাজ পড়বে, আর যদি বসতে অক্ষম হয় তাহলে শুয়ে নামাজ আদায় করবে।

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم عَنِ الصَّلاَةِ فَقَالَ ‏ "‏ صَلِّ قَائِمًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ ‏"‏‏

অর্থ: ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার আর্শরোগ ছিল। তাই রাসূল (সাঃ) এর খিদমতে নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম, রাসূল (সাঃ) বললেন দাড়িয়ে সালাত আদায় করবে, তা না পারলে বসে, যদি তা ও না পার তাহলে শুয়ে। (সহীহ বুখারী, হাদিস:১১১৭)

৮/ নামাজে তাকবীরে তাহরীমা:

তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাধা ফরজ। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ وَتَحْرِيمُهَا التَّكْبِيرُ وَتَحْلِيلُهَا التَّسْلِيمُ

অর্থ: হযরত আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন নামাজের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা, ’আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করার দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। আর সালাম ফিরানোর পর পার্থিব সকল কাজ হালাল হয়। (সুনানে অবু দাউদ, হাদিস:৬১)

৯/ নামাজের আহকাম আরকান সুন্দর ভাবে আদায় করা:

রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন-

الصَّلاةُ ثَلاثَةُ أَثْلاثٍ: الطَّهُوْرُ ثُلُثٌ، والرُّكُوْعُ ثُلُثٌ، وَالسُّجُوْدُ ثُلُثٌ فَمَنْ أَدَّاهَا بِحَقِّهَا قُبِلَتْ مِنْهُ وَقُبِلَ مِنْهُ سَائِرُ عَمَلِهِ وَمَنْ رُدَّتْ عَلَيْهِ صَلاتهُ رُدَّ عَلَيْهِ سَائِرُ عَمَلِهِ

অর্থ: নামাজ তিন ভাগে বিভক্ত পবিত্রতা এক তৃতীয়াংশ, রুকু এক তৃতীয়াংশ, জিদা এক তৃতীয়াংশ। সুতারং যে ব্যক্তি তার হক আদায় করবে,তার থেকে তার নামাজ ও সমস্থ আমল কবুল করা হবে। আর যার নামাজ প্রত্যাখ্যান করা হবে, তার সমস্থ আমল প্রত্যাখ্যান করা হবে।

১০/ পেশাব-পায়খানা চাপ নিয়ে নামাজ না পড়া:

রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন- 

لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلاَ وَهُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ

অর্থ: খাদ্য উপস্থিত হলে নামাজ নাই, এবং পেশাব-পাইখানা চাপ থাকলে কোন নামাজ নাই (সহীহ বুখারী,হাদীস:১২৭৪) তবে নামাজ পড়লে তা বাতিল হবে না।

১১/ আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদাই করা:

عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ غَنَّامٍ، عَنْ عَمَّتِهِ أُمِّ فَرْوَةَ، وَكَانَتْ، مِمَّنْ بَايَعَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ ‏ "‏ الصَّلاَةُ لأَوَّلِ وَقْتِهَا ‏"

অর্থ: কাসিম ইবনু গান্নাম (রহঃ) হতে তার ফুফু ফারওয়া (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) এর নিকট বাই’আত গ্রহকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে ভাল? তিনি বললেন, আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদাই করা। (সুনানে আত তিরমিজী, হাদিস: ১৭০)

(আরো বিভিন্ন আদব আছে আমরা নামাজের ভিবিন্ন বই থেকে শিখি আমল করার চেষ্ট করব,)

ব্লগে ফিরে যান

মতামত দিন