মুমিনের নামাজের বৈশিষ্ট্য

মুমিনের নামাজের বৈশিষ্ট্য

মুমিনরাই এক মাত্র আল্লাহ তায়লার কাছে মর্যদাশীল, কুরআনের অনেক জায়গায় মুমিনদের বিশেষ একটি গুন উল্লেখ করা হয়েছে, য়ে তারা নামাজ কজায়েম করে।
যেমন আল্লাহ এরশাদ করেন-

طٰسٓ تِلْكَ اٰیٰتُ الْقُرْاٰنِ وَكِتَابٍ مُّبِیْنٍ هُدًی وَّبُشْرٰی لِلْمُؤْمِنِیْنَ الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَیُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَهُمْ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ

অর্থ: ত্ব-সীন। এ কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত, মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও সুসংবাদ, যারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং তারা আখেরাতে দৃড় বিশ্বাস রাখে। (সূরা নামল, আয়াত:১-৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِلزَّكٰوةِ فٰعِلُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حٰفِظُوْنَ اِلَّا عَلٰۤی اَزْوَاجِهِمْ اَوْ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُهُم فَاِنَّهُمْ غَیْرُ مَلُوْمِیْنَ فَمَنِ ابْتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْعٰدُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ لِاَمٰنٰتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رٰعُوْنَ وَالَّذِیْنَ هُمْ عَلٰی صَلَوٰتِهِمْ یُحَافِظُوْنَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْوٰرِثُوْنَ الَّذِیْنَ یَرِثُوْنَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِیْهَا خٰلِدُوْنَ

অর্থ: নিশ্চয় সফল কাম হয়েছে মুমিনগন যারা তাদের নামাযে বিনীত , যারা অহেতুক কথা থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত আদায়কারী, যারা নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, তবে নিজেদের স্ত্রী বা মালিকানাধীন দাসীদের থেকে নয়, কেননা (এতে) তারা নিন্দনীয় হবে না। আর আর যারা এছাড়া (অন্য পথ) অন্দেষন করে তারাই সীমালঙ্ঘন কারী এবং যারা নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং যারা নিজেদের নামাজসমূহের প্রতি যত্নবান থাকে, তারাই উত্তরাধিকার লাভকারী, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তুরাধিকার লাভ করবে, তারা তাতে সর্বদা থাকবে। (সূরা মুমিন, আয়াত: ১-১১)

 

পূর্ববর্তী নবীদের নামজের প্রতি নির্দেশ

আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে যেভাবে বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, ওরকুম ভাবে পূর্ববর্তী নবীদেরকে কিছু বিষয় নির্দেশ দিতেন। আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি নামাজ ও ওসব বিষয়ের অন্যতম, যার বিধান আল্লাহ তায়ালা অন্যান্য নবীদেরকে ও দান করেন।

মুসা (আঃ) মাদইয়ান থেকে সহপরিবার মিসরের উদ্দেশ্য রওনা হলেন, পথে আগুন দেখতে পেয়ে তিনি কাছে এলেন, (আসলে এটা জাগতিক আগুন ছিল না, এটা ছিল আল্লাহর নূর) কাছে আসার পর আল্লাহ তায়ালা উনাকে ডেকে বললেন-

اِنِّیْۤ اَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَیْكَ اِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًی وَاَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا یُوْحٰی اِنَّنِیْۤ اَنَا اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِیْ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِیْ

অর্থ: নিশচয় আমি তোমাদের প্রতিপালক, সুতারং তোমার জুতা খুলে ফেল, কেননা তুমি পবিত্র ”তুওয়া” উপত্যকায় রয়েছ। আর আমি তোমাকে মনোনীত করছি, সুতারং ওহীর মাধ্যমে তোমাকে যা বলা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, সুতারং আমারই ইবাদত কর এবং আমার স্বরণের জন্য নামাজ কায়েম কর। (সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২-১৪)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহীম (আঃ) ইসহাক (আঃ) ইয়াকুব (আঃ) এর সম্পর্কে বলেন-

وَجَعَلْنٰهُمْ اَىِٕمَّةً یَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا وَاَوْحَیْنَاۤ اِلَیْهِمْ فِعْلَ الْخَیْرٰتِ وَاِقَامَ الصَّلٰوةِ وَاِیْتَآءَ الزَّكٰوةِ وَكَانُوْا لَنَا عٰبِدِیْنَ

অর্থ: আমি তাদের বানিয়েছিলাম নেতা, যারা আমার নির্দেশে (মানুষকে) পথপ্রদর্শন করত। আমি ওহির মাধ্যমে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলাম সৎকর্ম করতে, নামাজ কায়েম করতে, এবং যাকাত আদায় করতে, আর তারা আমারই ইবাদতকারী ছিল। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৭৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

وَاَوْحَیْنَاۤ اِلٰی مُوْسٰی وَاَخِیْهِ اَنْ تَبَوَّاٰ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُیُوْتًا وَّاجْعَلُوْا بُیُوْتَكُمْ قِبْلَةً وَّاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ

অর্থ: আমি মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি ওহী নাযিল করলাম যে, তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরে ঘর-বাড়ি কর, এবং নামাজ কায়েম কর আর মুমিনদেও সুসংবাদ দাও। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮৭)

আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈলকে নামাজের বিধান দেওয়ার বিষয়টি কুৃরআন কারীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন-

وَلَقَدْ اَخَذَ اللهُ مِیْثَاقَ بَنِیْۤ اِسْرَآءِیْلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَیْ عَشَرَ نَقِیْبًا وَقَالَ اللهُ اِنِّیْ مَعَكُمْ لَىِٕنْ اَقَمْتُمُ الصَّلٰوةَ وَاٰتَیْتُمُ الزَّكٰوةَ وَاٰمَنْتُمْ بِرُسُلِیْ وَعَزَّرْتُمُوْهُمْ وَاَقْرَضْتُمُ اللهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّاُكَفِّرَنَّ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَلَاُدْخِلَنَّكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ فَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیْلِ

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেকে আমি বারজন নেতা নির্ধারিত করেছিলাম, আর আল্লাহ বলেছেন নিশ্চয় আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, যদি তোমরা নামাজ আদায় কর, যাকাত আদায় কর, আমার রাসূলদের প্রতি ঈমান আন, তাদের সম্মান কর, এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তবে অবশ্যয় আমি তোমাদের পাপসমূহ মোসন করব, এবং তোদেরকে এমন উদ্যানসমূহে প্রেবেশ করাব, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত। আর এর পরও তোমাদের মধ্যে যে কুফর অবলম্বন করবে, নিশ্চয় সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে। (সূরা মায়েদা, আয়াত: ১২)

 

নামাজ না পড়ার শাস্তি

নামাজ না পড়লে শুধু পারকালেই নয়, দুনিয়ার জীবনেও নেমে আসে অশান্তি, হতাশা, অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট। যে নামাজ আদায় কওে না তার চেহারায় নূর ও উজ্জ্বলতা থাকে না। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

فِیْ جَنّٰتٍ ۛیَتَسَآءَلُوْنَ، عَنِ الْمُجْرِمِیْنَ، مَا سَلَكَكُمْ فِیْ سَقَرَ، قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّیْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِیْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْخَآىِٕضِیْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِیَوْمِ الدِّیْنِ، حَتّٰۤی اَتٰىنَا الْیَقِیْنُ

অর্থ: তারা জান্নাতে থাকবে, তারা জিজ্ঞাসাবাদ করবে অপারাধীদের সম্পর্কে, কোন জিনিস তোমাদেরকে জাহান্নামে দাখিল করছে? তারা বলবে আমরা নামাজিদের আন্তর ভুক্ত ছিলাম না। আমরা মিসকীনদের খাওয়াতাম না, আর (আসার) আলাফে লিপ্ত ব্যক্তিদের সাথে আমরা ও তাতে লিপ্ত হতাম, এবং আমরা বিচার দিবসকে অস্বীকার করতাম, পরিশেষে নিশ্চিত বিষয় আমাদেও কাছে এসে গেল। (সূরা মদ্দাসসির, আয়াত:৪০-৪৭)

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

وَمَا مَنَعَهُمْ اَنْ تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقٰتُهُمْ اِلَّاۤ اَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهٖ وَلَا یَاْتُوْنَ الصَّلٰوةَ اِلَّا وَهُمْ كُسَالٰی وَلَا یُنْفِقُوْنَ اِلَّا وَهُمْ كٰرِهُوْنَ

অর্থ: তাদের দান কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এটা যে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের সঙ্গে কুফরী করেছে এবং তারা নামাজে আসে (চরম) আলসতার সথে এবং তারা ব্যয় করে (খুব) অনিচ্ছার সাথে।

اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ ۚ وَاِذَا قَامُوْۤا اِلَی الصَّلٰوةِ قَامُوْا كُسَالٰی یُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَلَا یَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیْلًا.

অর্থ: নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সথে ধোঁকাবাজি করে, অতচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন, আর তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন অলসতার সাথে দাঁড়ান, তারা মানুষকে দেখায় আর আল্লাহকে খুব সামান্যই স্বরণ করে। (সূরা নিসা, আয়াত ১৪২)

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ ، الَّذِیْنَ هُمْ یُرَآءُوْنَ، وَیَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ۠

অর্থ: দুর্ভোগ সেই নামাজীদের, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন, যারা মানুষকে দেখায় এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসও দেয় না। (সূরা মাঊন, আয়াত: ৪-৭)

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কাফেরদেও অনেক ভর্ৎসনা করেছেন, এক জায়গা তাদের নিন্দা করেছেন-

فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰى، وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰى، ثُمَّ ذَهَبَ اِلٰۤی اَهْلِهٖ یَتَمَطّٰى، اَوْلٰى لَكَ فَاَوْلٰى، ثُمَّ اَوْلٰى لَكَ فَاَوْلٰى

অর্থ: সে বিশ্বাস করেনি এবং নামাজ পড়েনি, বরং অস্বীকার করেছে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতঃপর সে দম্ভ করতে করতে তার পরিবারের কাছে চলে গেছে, দুর্ভোগ তোমাদের জন্য দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ ,অতঃপর দুর্ভোড়গ তোমার জন্য, দুর্ভোগের উপর দুর্ভোগ। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ৩১-৩৫)

(আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নামাজের যত্নবান হওয়ার তাওফীক দান করুন আমীন।)

ব্লগে ফিরে যান

মতামত দিন