ইসলামের দৃষ্টিতে রাজনীতি

ইসলামের দৃষ্টিতে রাজনীতি

শারীয়াহ আইন:

ইসলামে রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো শারীয়াহ আইন, যা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে প্রাপ্ত আইন ও নীতিমালা অনুসারে পরিচালিত হয়। শারীয়াহ আইন ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।


ইসলামের দৃষ্টিতে রজনীতি জায়েয আছে, রাসূল (সাঃ) এর জীবনে রাজনীতি করছেন, ইসলামের দৃষ্টিতে রাজনীতি করতে হলে ইসলামী হকুমত অনুযায়ী কররতে হবে, বর্তমানে যে রাজনীতি চলতেছে, তা কিন্তু ইসলামের কোন আইন বাস্তবতা নাই। রাসূল (সাঃ) এর রাজনীতি আমাদের রাজনীতির সাথে কোন মিল নাই।

এখন আমরা ইসলামী রাজনীতি নামে যে রাজনীতি করি আর তখনকার আলেমরা যে ইসলামের রাজনীতি করেছেন দুটোর মাঝে আকাশ-পাতাল ফরক।

 

ঐ সময়ের আলেমদের রাজনীতির ধারা ও সুফল সম্পর্কে কিছু কথা।
যেমন ধরুন, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী (রাহ.)। তিনি মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রাহ.)- কে নিয়ে ‘কারারদাদে মাকাসিদ’ তৈরি করেছেন। যা পাকিস্তানের সংবিধানের ভূমিকা; বরং পরবর্তীতে একে মূল সংবিধানের অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাঁদের স্থলাভিষিক্তরা পাকিস্তানের বিভিন্ন শ্রেনি ও মতের লোকদেরকে এক করেছেন।

আজকে আমরা কখনো আমাদের বড় বড় ইসলামী মুভমেন্টগুলোতে করতে পারি না, তারা সেটা করেছেন। বেরলভী, সালাফীসহ যতগুলো গোষ্ঠী ছিল সবাইকে নিয়ে একত্রে বসেছেন এবং ‘বাইস নেকাতী প্রোগ্রাম’ বিন্যস্ত করেছেন। ইসলাম বিদ্বেষীরা বলেছিল-

کونسا اسلام قائم کروگے
কোন ইসলাম কায়েম করবেন?

ওনারা বলেছেন-

یہ اسلام قائم کرینگے.
এই যে, ইসলাম কায়েম করব।

এতে কোনো ইখতেলাফ নেই। এখানে সকল গোষ্ঠী, সকল ফিরকা, সকল দল-উপদল একমত
তাহলে দেখতেই পাচ্ছেন, তাঁদের রাজনীতি আর আমাদের রাজনীতির মাঝে ফরকটা কত? তারা কত বড় অবদান রাখতে পেরেছেন। সেটার ফল এখনো ভোগ করছে পাকিস্তানের লোকেরা। ‘করারদাদে মাকাসিদ’ শিরোনামে পাকিস্তানের সংবিধানের প্রস্তাবনাতে সে নেকাতগুলো এখনো লেখা আছে। সেকুলার লোকেরা সেটা এখনো বাতিল করতে পারেনি।

এরপরে আসুন, যখন একসময় কাদিয়ানীদের প্রশ্ন এল, তারা যখন মানুষের ঈমান ধ্বংস করা শুরু করল, তখন যারা রাজনীতি করতেন তারাই ভূমিকা রেখেছেন। মুফতী মাহমুদ ছাহেবের নেতৃত্বে তখন বড় কাজ হয়েছে। তিনি সংসদে ছিলেন। বাইরে ছিলেন হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ বিন্নুরী (রাহ.)- সহ অন্যান্য উলামা-মাশাইখ। ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টি ছাড়া পুরো পাকিস্তানের সকল দলকে তারা এক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। যে দলগুলোর মধ্যে ন্যাপের মত দলের লোকেরাও ছিল, বামপন্থীরাও ছিল। তাদেরকে এক মঞ্চে এনেছেন। সবাইকে পার্লামেন্টে কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে উৎসাহিত করেছেন। সবাই একসাথে বলেছে যে, হাঁ, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষিত করা হোক। কিন্তু আজকে আমাদের দেশে দেখবেন যে, ঐ সমস্ত বাম দলগুলোর থেকেই যারা শাখা হয়ে এসেছে, তারা কাদিয়ানীদের ধর্মীয় সভাগুলোতে গিয়ে গিয়ে লেকচার দেয়। এটা সেটা বলে। তারা তাদের পূর্বসূরিদের ইতিহাস দেখে না। তাদের পূর্বসূরিরা কাদিয়ানী বিরোধী মঞ্চে যোগ দিয়েছিল।

তাহলে এক মুফতী মাহমুদ ছাহেব, তার দলে সংসদসদস্য সংখ্যা তখনো অনেক বেশি ছিল না, অথচ তিনি এক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য যদি ইসলামী রাজনীতি করতেই হয়, তাহলে তো আপনার কোনো একটা অবস্থান থাকতে হবে। একটা আদর্শ-উদ্দেশ্য থাকতে হবে। একটা ভূমিকা থাকতে হবে।

রাজনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে একটা প্রয়োজন বা আদর্শ থাকতে হবে
ইসলামের রাজনীতি কি আদর্শ ছাড়া হয়? ইসলামী রাজনীতি বলতে খুব সহজ-সরলভাবেই মানুষ যেটা বোঝে তা হচ্ছে, তাঁরা দেশে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সরকার কায়েম করতে চান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সরকার কায়েমের কোন্ রাস্তাটা উদ্ধার হচ্ছে এভাবে জোটের মধ্যে গিয়ে? আর এভাবে নমিনেশন চাওয়াতে মান-ইজ্জত কিছু কি থাকছে? বলা হচ্ছে যে, আমরা পঞ্চাশ আসনে তৈরি আছি, চল্লিশ আসনে তৈরি আছি। এরপর দুটো-তিনটা আসন পাচ্ছে। এভাবে উদ্দেশ্যহীন চলার আখের ফায়দাটা কী?

Back to blog

Leave a comment