শিশুদের মনের অবস্থা নরম কাদামাটির মতো, যা সহজেই গঠন করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে যা শেখানো হয়, তা তাদের জীবনের অবশিষ্টাংশে প্রভাব ফেলে।আমরা যদি শিশুদের মনের বাগানে ঈমানের ফুল ফুটাতে চাই, যদি আমরা চাই তারা বড় হয়ে আল্লাহর বিশ্বস্ত বান্দা হয়ে উঠুক, তাহলে জীবনের প্রথম থেকেই এটি শুরু করতে হবে। আমরা যদি তাদের জীবনের প্রথম দিকে সঠিক দ্বীন শিক্ষা দিতে না পারি, তাহলে তাদের সারাজীবন ধর্ম মেনে চলা বা গ্রহণ করার আশা করা অযৌক্তিক।
কিন্তু আমরা কেন আমাদের সন্তানদের দ্বীন শিক্ষা দিতে অবহেলা করি তার প্রধান কারণ আমরা দ্বীন অর্থ জানি না। আমরা বিশ্বাস করি যে কুরআন তিলাওয়াত করা, নামায পড়া আর কিছু দোয়া শেখা মানেই দ্বীন শিক্ষা। আমরা প্রায়ই দ্বীনকে ধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলি। দ্বীন মানে কি আর ধর্ম মানে কি তা আমাদের বুঝতে হবে। দ্বীন একটি খুব বিস্তৃত শব্দ যা ধর্মকেও অন্তর্ভুক্ত করে। আমরা আমাদের সন্তানদের ধর্ম শেখাই, দ্বীন নয়। । তাদের শিখাতে হবে কিভাবে দ্বীনের পথে চলতে হবে। তারা আল্লাহকে চিনবে, তারা আল্লাহর রাসূলকে চিনবে,সাহাবীদের জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবে। তারা তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী কাজ করবে।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়ক। কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার মাধ্যমে তারা সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে শিখে। ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভ (কুরআনের শিক্ষা, সালাত, রোজা, যাকাত, এবং হজ) শেখানোর মাধ্যমে তাদের নৈতিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। এভাবে, তারা ধর্মীয় আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
দ্বীন শিক্ষা ছোটদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ায়। মসজিদে, মাদ্রাসায় বা স্কুলে অন্যান্য শিশুদের সাথে মিলে তারা সামাজিকীকরণ শিখে। এতে তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতা, এবং সহমর্মিতা তৈরি হয়। তারা নিজেদের পরিচয় ও সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত থাকে, যা তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
ছোটবেলায় যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। একটি শিশু যে নৈতিক মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা ছোটবেলায় গ্রহণ করে, তা তার পুরো জীবনে প্রভাবিত করে। দ্বীন শিক্ষা তাদের নৈতিক ভিত্তি মজবুত করে, যা তাদের ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করতে সহায়ক হয়।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা প্রদান করতে কিছু কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে:
ছোটদের জন্য দ্বীন শিক্ষা আনন্দদায়ক এবং ইন্টারেক্টিভ করা উচিত। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষা, গল্প বলা, এবং সৃজনশীল কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় শিক্ষা সহজেই গ্রহণ করতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনের সাথে দ্বীন শিক্ষাকে সংযুক্ত করা উচিত। যেমন, খাবার খাওয়ার আগে দোয়া শেখানো, ঘুমানোর আগে দোয়া পাঠ করা, কার সাথে কেমন আচরন করা উচিৎ ইত্যাদি।
পরিবার থেকেই শিশুরা তাদের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকে। পরিবারের বড়দের যেভাবে চলাফেরা করতে দেখবে তারা তাই শিখবে। বড়দের রোল মডেল হিসেবে কাজ করা উচিত। শিশুরা বড়দের আচরণ অনুকরণ করে, তাই বাবা-মা র উচিত দ্বীন অনুযায়ী জীবনযাপন করা।তবেই শিশুরা দ্বীন শিক্ষা সহজেই নিজের অন্তরে গেথে নিবে।
বর্তমান যুগে পরিবারের পাশাপাশি আরও অনেক মাধ্যম রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে সহজেই আমাদের সন্তানদের দ্বীন সম্পর্কে জানাতে ও বুঝাতে পারি। বই তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারি মাধ্যম। এছারা অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ, এবং অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করে শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা যেতে পারে।
ছোটদের দ্বীন শিক্ষা তাদের জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে। এটি তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়ক এবং তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে দ্বীন শিক্ষা প্রদান করে, আমরা একটি সুশৃঙ্খল, নৈতিক এবং ধর্মীয়ভাবে সজাগ প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি।