কুরআন কারীম তেলাওয়াতের গুরত্ব ও ফযীলত

কুরআন কারীম তেলাওয়াতের গুরত্ব ও ফযীলত

কুরআন কারীম তেলাওয়াতের গুরত্ব ও ফযীলত

কুরআন নাযিল হল মাত্র এক মাসে আর সে মাস হল রমযানুল মুবারক। এ মাসে মুমিন মাত্রই কুরআনের সাথে এক অকৃত্রিম সম্পর্ক গড়ে উঠে। দিনে সিয়াম (রোজা) রাত্রে কিয়াম (নামাজ) তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, যিকির, তিলাওয়াত, বিভিন্ন নেক আমলে পাবন্দি থাকে।
বস্তুত রমযানকে ঘিরে কুরআন কারীমের সাথে একজন মুমিনের সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়। কুরআনের নূরে নূরান্তিত হয়।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
اِنَّ الَّذِیْنَ یَتْلُوْنَ كِتٰبَ اللهِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَ اَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ سِرًّا وَّ عَلَانِیَةً یَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَّنْ تَبُوْرَ، لِیُوَفِّیَهُمْ اُجُوْرَهُمْ وَ یَزِیْدَهُمْ مِّنْ فَضْلِه اِنَّهٗ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ

অর্থ: যারা আল্লাহ তায়ালার কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে)ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা এমন ব্যবসার আশাবাদী, যা কখনও লোকসান হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্র প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন।নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত মহাগুণগ্রাহী। ( সূরা ফাতির (৩৫): ২৯-৩০)

কেউ কথা বা কাজ দ্বারা বুুঝাইতে পারে যে, কুরআন তিলাওয়াত শুধু রমযান মাসে জন্য না, এমনটি কখনই মনে করা জাবে না। কুরআন তিলাওয়াত পুরা বছর করতে হবে, এমন কি সারা জীবন করতে হবে।

اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَ جِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَ اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَ

অর্থ: মুমিন তো তারাই (যাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরন করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তার তার আয়াত সমুহ তিলাওয়াত করা হয় তাদের ঈমান উন্নতি হয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। (সূরা আনফাল, আয়াত: ০২)

 

কুরআন তিলাওয়াতের আদব

কুরআন অন্য কোন বই এর মত না, কুরআন পড়তে হয় যথাযথ ভক্তি শ্রদ্ধা আদবের সহকারে। নিম্নে কয়েকটি আদব উল্লেখ করা হলো

১/ আউজুবিল্লাহ পড়া: তিলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়া, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِفَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

অর্থ: সুতরাং যখন আপনি কুরআন পাঠ করবেন, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন।। (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)

২/ বিসমিল্লাহ পড়া: তিলাওয়াতকারীর উচিত সুরা তাওবা ছাড়া সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। রাসূল কারীম (সাঃ) থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সুরা শেষ করে আরেক সুরা শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ পড়ে শুরু করতেন।

৩/ সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কুরআন পড়া:

قَالَ الْبَرَاءَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ (وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ) فَمَا سَمِعْتُ أَحَدًا أَحْسَنَ صَوْتًا أَوْ قِرَاءَةً مِنْهُ

বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল কারীম (সাঃ) কে এশার নামাজে সুরা ত্বিন পড়তে শুনেছি, আমি রাসূল কারীম (সাঃ) এর চেয়ে সুন্দর কন্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনি নাই। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৭৫৪৬)

৪/ রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুনি আসলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ ثُمَّ يُصَلِّيَ مَعَهُ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى وَفَضْلَ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ‏"‏

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি গোসল করে তারপর জুমআর নামাজে আসে এবং তার জন্য যা ফরজ করা হয়েছে তা নামায পড়ে অতঃপর সে শোনে। তার উপদেশ শেষ করেন অতঃপর সে তার সাথে সালাত আদায় করবে এবং তার এবং পরবর্তী জুমার মধ্যে যা ঘটেছিল তার জন্য এবং বাকি তিন দিনের জন্য তাকে ক্ষমা করা হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৭২)

৫/ নিয়ত শুদ্ধ করা: রাসূল কারীম (সাঃ) বলেছেন যে,  তিন শ্রেণির মানুষের উপর কেয়ামতের দিন জাহান্নাম দ্বারা আযাব দেওয়া হবে,তাদের মধ্যে এক জন ঐব্যক্তি যিনি ইখলাছের সাথে কোরআন তিলাওয়াত কররে না। (তিরমিজি, হাদিস; ২৩৮২)

৬/ সুর সহকারে তিলাওয়াত করা: এটি সুন্দর করে তিলাওয়াত করার অংশ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالْقُرْآنِ وَزَادَ غَيْرُهُ يَجْهَرُ بِهِ

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূল কারীম (সাঃ) বলেছেন যে লোক সুন্দর আওয়াজে কুরআন পাঠ করে না, সে আমাদের মধ্যে নন।

৭/ কুরআন তিলাওআতের সময় ক্রন্দন করা: আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

وَ یَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡكُوۡنَ وَ یَزِیۡدُهُمۡ خُشُوۡعًا سُجود

অর্থ: আর তারা কাদতে কাদতে লুটিয়ে পড়ে এবংএটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সুরা বনিা ইসরাইল, আয়াত ১০৯)

৮/ ফজিলতপূর্ণ সুরা গুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তেলাওয়াত করা

قَالَ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِأَصْحَابِهِ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ قَ ثُلُثَ الْقُرْآنِ فِيْ لَيْلَةٍ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوْا أَيُّنَا يُطِيْقُ ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ الله الْوَاحِدُ الصَّمَدُ ثُلُثُ الْقُرْآنِ

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল কারীম (সাঃ) তার সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াত করতে অক্ষম? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এটা পারবে? তখন রাসূল কারীম (সাঃ) বললেন ”কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থৎ সূরা এখলাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ। (সহীহ বুখারী, হাদিস; ৫০১৫৮)

৯/ কুরআনের মর্ম নিয়ে চিন্তা করা: এটিই কুরআন তিলাওয়াতের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ আদব।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ مُبٰرَكٌ لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِهٖ وَ لِیَتَذَكَّرَ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

অর্থ: আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভিরভাবে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানগন উপদেশ গ্রহন করে (সূরা সোয়াদ, আয়াত; ২৯)

১০/ তারতিলের সঙ্গে (ধীরস্থিরখভাবে) কুরআন পড়া:
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ ٱلْقُرْءَانَ تَرْتِيلًا

অর্থ: অথবা তার চেয়ে একটু বাড়াও। আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কুরআন পাট কর। (সূরা মুজ্জাম্মিল আয়াত: ৪)

১১/ ধৈর্য নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা: যিনি সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না, তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেন।

عَنْ عَائِشَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ حَافِظٌ لَهُ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ ، وَمَثَلُ الَّذِي يَقْرَأُ القرآن وَهُوَ يَتَعَاهَدُهُ وَهُوَ عَلَيْهِ شَدِيدٌ فَلَهُ أَجْرَانِ

অর্থ: হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন, কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, সে সম্মনিত রাসূল ও পুণ্যাত্মা ব্যত্তিদের সঙ্গে থাকবে, আর যে ব্যক্তি আটকে আটকে পড়বে তার জন্য দ্বিগুন নেকি লেখা হবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৪৯৩৭)

১২/ যথাসম্ভব আদব সহ বসা: বসা, দাড়িয়ে, চলমান ও হেলান দেওয়া। সর্ববস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি আছে।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-

ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ

অর্থ: যারা দাড়িয়ে বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে এবং আসমান সমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে হে আমাদের রব আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেন নাই, আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯১)

১৪/ তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আসলে সিজদা দেওয়া। সিজদর নিয়ম হলো তাকবির দিয়ে সিজদায় চলে যাওয়া।

১৫/ কুরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা:

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ إِنَّ أَفْوَاهَكُمْ طُرُقٌ لِلْقُرْآنِ فَطَيِّبُوهَا بِالسِّوَاكِ

অর্থ: আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মুখ হল কুরআনের রাস্তা, অতএব সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৯১)

 

কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়ম কানুন

কুরআন তিলাওয়াতের সময় যে সব বিষয় প্রতি খেয়াল রাখতে হবে

১/আরবী হরফের মাখরাজ
২/ আরবী হরফের সিফাত বা বৈশিষ্ট
৩/নূন ও মীম সাকিন, তাশদীদযুক্ত নূন ও মীম
৪/ তানউন
৫/ মদ্দের প্রকারভেদ ও বিধান
৬/ ইদগাম বা সংযুক্ত
৭/ রা এর বিধান

 

রাসূল (সাঃ) নিজে তিলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদের থেকে ও তিলাওয়াত শুনতেন

রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করতেন, হাদীস ও সীরাতের কিতাবে এই বিষয় বর্নণা পাওয়া যায়। রাসূল (সাঃ) নামাজে, নামাজের বাহিরে, রাতের আধাওে, দিনের আলোতে, সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন যে,রাসূল (সাঃ) নামাযে দাড়িয়ে এত দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করতেন যে, তার পা মুবারক ফুলে যেত। (সহীহ মুসলিম,হাদীস ২৮১৯, ২৮২০)

রমযানুল মুবারক মাসে হযরত জিবরাইল (আঃ) কে রাসূল (সাঃ) পূর্ণ কুরআন শোনাতেন এবং জিবরাইল (আঃ) থেকেও পূর্ণ কুরআন শুনতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬)

রাসূল কারীম (সাঃ) যেভাবে নিজে তিলাওয়াত করতেন তেমনি সাহাবীদের থেকে ও তিলাওয়াত শুনতেন। একবার রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) কে বললেন, তুমি আমাকে একটু তিলাওয়াত করি শুনাও। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে তিলাওয়াত শুনাব, আপনার উপর তো কুরআন নাযিল হয়েছে, রাসূল (সাঃ) বললেন, আমার মনে চাচ্ছে কারো থেকে একটু তিলাওয়াত শুনি, রাসূল (সাঃ) এর কথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) সূরা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াত পযন্ত আসলেন-

فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا

সুতারং সেই দিন কেমন হবে, যখন আমি প্রত্তেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আমি তোমাকে ওইসব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব? (সূরা নিসা ,আয়াত:৪)

এতটুকু তিলাওয়াত করার পর নবীজী (সাঃ) ঠিক আছে। নবীম (সাঃ) থামতে বলার পর আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি, তার দুচোখ বেয়ে অশ্র ঝরছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৪৯,৫০৫৫,৪৫৮২,)

 

কুরআন তেলাওয়াত কারীদের জন্য কি কি লাভ হবে

কুরআন মাজীদ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কালাম, যারা আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করে, চিন্তা ভাবনা কওে, কুরআন থেকে হেদায়েত গ্রহন করে, কুরআন শিক্ষা দেয় এবং পারস্পরিক কুরআনের চর্চা করেঅ আল্লাহ তায়ালা তাদেও অত্যন্ত খুশি হন, তাদেও উপর বিষেশ রহমত নাযিল করেন, তাদেও অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দেন, তাদের মর্তবা বুলন্দ করতে থাকেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-

وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ، إِلّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرّحْمَةُ وَحَفّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ

অর্থ: আর যারা আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরিক কুরআনের চর্চা করে, তাদেও প্রতি সাকীনা তথা এক প্রকার প্রশান্তি বর্ষিত হয়, এবং রহমত তাদেরকে বেষ্টন করে নেয়, এবং আল্লাহ তার কাছের ফিরিশতাদেও মাঝে তাদেও আলোচনা করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯)

আল্লাহ আমাদেরকে সেই মুবারক মজরিসে শরীক করে নিন-আমীন।

কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ ও উপকারী। দুয়াতে এবং পরকালে এবং শারীরিক, মানসিক ও উপকার। সারা পৃথিবীর বুকে কুরআন কারীম এমন একটা কিতাব, যার প্রতি হরফে নেকি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউস (রাঃ) বলেন রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন-

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، لَا أَقُولُ الم حَرْفٌ، وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيمٌ حَرْفٌ

অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন কারীমের একটি হরফ পড়ল তার জন্য একটি নেকি রয়েছে, আর একটি নেকি দশ নেকির সমতুল্য, নবী কারীম (সাঃ) বলেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী,হদীস ২৯১০)

সুতারং আলিফ লাম মীম তিলাওয়াত করলে কমপক্ষে ত্রিশ নেকি হবে, ইনশাআল্লাহ। রাসূল কারীম (সাঃ) দৃষ্টান্ত স্বরূপ আলিফ লাম মীম উল্লেখ করছেন। আর এটি এমন এক শব্দ যার অর্থ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বুঝা গেল কুরআন কারীমের অর্থ না বুঝে পড়লেও অনেক সাওয়াব রয়েছে। আর যদি অর্থ বুঝে উপলব্ধির সাথে কুরআন তিলাওয়াত করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে আরো কত দিবেন তা আল্লাহ তায়ালায় ভালো জানেন।
কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত হাদীসের বিবরণ থেকে সুন্দর করে বুঝা আসে-

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ ‏"‏ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلَى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيقِ فَيَأْتِيَ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِي غَيْرِ إِثْمٍ وَلاَ قَطْعِ رَحِمٍ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ نُحِبُّ ذَلِكَ ‏.‏ قَالَ ‏"‏ أَفَلاَ يَغْدُو أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمَ أَوْ يَقْرَأَ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلاَثٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ثَلاَثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الإِبِلِ ‏"‏ ‏.‏

অর্থ: উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমরা সুফফায় অবস্থান করছিলাম। রাসূলে কারীম (সাঃ) আমাদের সামনে আসলেন। বললেন, আচ্ছা বল তো, কেউ বুতহার অথবা আকিকে গিয়ে উচু কুজ বিশিষ্ট দুটি উটনী নিয়ে আসবে। কারো উপর জুলুম না করি, কোনো অপরাধ না করি, কোনো আত্তিয় সম্পর্ক ছিন্ন না করি, খুবই ন্যায়সঙ্গতভাবে। তোদের কে আছে এমনটি ছাইাবে? সাহাবীগন বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ এরকুম হলে তো আমদের সবাই ছাইবে, নবী করীম (সাঃ) বললেন, মসজিদে গিয়ে এলেম শিখা অথবা কুরআনের দুটি আয়াত পড়া, সেই দুটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৩)

তৎকালীন আরবে উচু কুজ বিশিষ্ট উটনী অইেক মূল্যবান সম্পদ ছিল, নবী কারীম (সাঃ) পার্থিব এ সম্পদরে তুলনা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন পরকালীন বিবেচনায় কুরআনের একেকটি আয়াত পড়া-শিখা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

উাত্তম ভাবে কুরআন কারীম তিলাওয়াত কারীদের সম্মান ,তাদের অনেক বড় ফযীলত রয়েছে, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-

الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقّ، لَهُ أَجْرَانِ

অর্থ: যারা উত্তমরূপে কুরআন তিলাওয়াত করবে তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত ফিডিরশতাদের সাথে, আর যে কুরআন পড়তে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সওয়াব।

হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন-

اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِه

অর্থ: তোমরা কুরআন পড়, কেননা কিয়ামতের দিন কুরআন তার ছাহেবের জন্য সুপারিশ করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৪)

ছাহিবে কুরআন কে? মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, ছাহিবে কুরআন ঐব্যক্তিকে বলা হয় যিনি কুরআন তিলাওয়াতে মুশগুল থাকেন, কুরআনের হেদায়েত ও বর্তা গুলি গ্রহন করেন, কুরআনের বিধান গুলি আমলে নেন, কুরআন হিফয করেন, মোট কথা কুরআনুল কারীম তার জীবনের আরাধনা। (ক‚তুল মগতাযী আর জামিইত তিরমিযী ২/৭৩২)

 

যে কুরআন তিলাওয়াত করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত

 

নেককার বদকার সবার জন্য আল্লাহর কালাম, যে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করে আর যে নিয়মিত তিলাওয়াত করে না সবার জন্য কুরআন কারীম, তবে আমি চেষ্ট করবো তিলাওয়াত কারীদের অন্তর্ভুক্ত হােক, আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে কুরআন তিলাওয়াত কারীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন, আমীন ।

عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالْأُتْرُجَّةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيْحُهَا طَيِّبٌ وَالَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَالتَّمْرَةِ طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلَا رِيْحَ لَهَا وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الرَّيْحَانَةِ رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ وَمَثَلُ الْفَاجِرِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْحَنْظَلَةِ طَعْمُهَا مُرٌّ وَلَا رِيْحَ لَهَا.

অর্থ: হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে (এবং সে অনুযায়ী আমল করে) সে উতরুজ্জা ফলের মত, যার স্বাদ ও ভালো ঘ্রান ও সুন্দর। আর যে কুরআন পড়ে না সে খজুরের মত যার স্বাদ ভালো তবে কোন ঘ্রান নেই, আর যে বদকার ব্যক্তি কুরআন পড়ে সে রায়হানা সুগন্ধির মতো, যার ঘ্রান মোহনীয়, তবে স্বাদ ও তেক্ত। আর যে বদকার ব্যক্তি কুরআন পড়ে না সেহানযালা ফলের মতো, যার স্বদ তেতো, আবার কোন সুবাস নাই। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ২০৫০)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন-

تَعَلّمُوا القُرْآنَ فَاقْرَءُوهُ وَأَقْرِئُوهُ، فَإِنّ مَثَلَ القُرْآنِ لِمَنْ تَعَلَّمَهُ فَقَرَأَهُ وَقَامَ بِهِ كَمَثَلِ جِرَابٍ مَحْشُوٍّ مِسْكًا يَفُوحُ بِرِيحِهِ كُلّ مَكَانٍ وَمَثَلُ مَنْ تَعَلّمَهُ فَيَرْقُدُ وَهُوَ فِي جَوْفِهِ كَمَثَلِ جِرَابٍ أُ وكِئَ عَلَى مِسْك

অর্থ: তোমরা কুরআন শিখ, অতএব তা পড় এবং পড়াও, কেননা যে কুরআন শিখল এরপর তা পড়ল এবং রাত্রে (তাহাজ্জুদের) নামাযে তা তিলাওয়াত করল সে এমন পাত্রের মতো, যা মেশক আম্বর দিয়ে পূর্ণ, যা সর্বত্ত সুগন্ধি ছড়ায়, আর যে ব্যক্তি কুরআন শিখে শুয়ে থাকল এ ব্যক্তি এমন পাত্রের ন্যায় যা মেশকে ভরে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। (ফলে তার থেকে সুগন্ধি বাহির হয় না) (জামে তিরমিযী, হাদিস: ২৮৭৬)

 

কুরআন না শিখলে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন-

وْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ

অর্থ: এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তার চেয়ে আরো অধম ও নিকৃষ্ট এরাই হলো গাফেল। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭৯)

Back to blog

Leave a comment